ইজারার মাঠ খালি, ব্যস্ত সড়কে পশুর হাট
চট্টগ্রাম নগরের স্টিলমিল বাজার থেকে খালপাড় রোড হয়ে আধা কিলোমিটার দূরে টিএসপি মাঠ। মাঠটি পশুর হাটের জন্য ইজারা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। পশু তো দূর, মাঠটিতে নেই একটি খুঁটিও।
ইজাদারের দাবি, ইজারায় পশুরহাটের স্থানে টিএসপি’র মাঠের কথা লেখা থাকলেও বিগত ২৫ বছর ধরে সড়কের ওপরেই বসছে ওই পশুরহাট। এমনকি হাট বসাতে সিটি করপোরেশনকে জামানতও দিয়েছেন তিনি। এছাড়া সড়কের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলেও দায়ভার নেবেন ইজারাদার।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সরেজমিনে নগরের পতেঙ্গার স্টিলমিল এলাকার ওই পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, পতেঙ্গা থানা থেকে আনুমানিক দেড়শ মিটার দূরত্ব থেকেই শুরু খালপাড় সড়ক। আর সেই সড়কের শুরুতেই বসানো হয়েছে হাটের মূল কাউন্টার। সড়কটি দিয়ে টিএসপি মাঠে (পশুর হাটের নির্ধারিত স্থান) যেতে হাতের বাঁ পাশেই সারিবদ্ধভাবে বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে।
আর সেখানেই গরু বেঁধে রেখেছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বেপারিরা। সড়কের ওপর রাখা গরুগুলো বেচাকেনা শুরু করে হয়েছে। আর সড়কজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গরুর বর্জ্য।
এ সময় দেখা গেছে, ওই সড়কে এসে থামছে গরুবাহী ট্রাক। আর সড়ক দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করায় পশু নামানোর সময় তৈরি হচ্ছে যানজট। ফলে বিপাকে পড়ছেন সড়ক দিয়ে চলাচলকারী স্থানীয়রা, স্থবির হয়ে যাচ্ছে সড়কে যান চলাচল।
এদিকে, সড়কে পশুর হাট বসানোর ফলে বিপাকে পড়েছেন সড়কের দুপাশের দোকানিরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানি বলেন, ‘প্রতিবছর টিএসপি মাঠ ইজারা নিয়ে পশুর হাট বসানো হচ্ছে খালপাড়ের এই সড়কে। আমার দোকানের ঠিক সামনেই গরু রাখে। এখন কাস্টমার কিভাবে আসবে? আর দুর্গন্ধের কথা কি বলবো। পুরোপুরি হাট জমে উঠলে এখানে দোকানদারিই করা যাবে না।’
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘পুলিশ এসব দেখে না? এখান থেকে পতেঙ্গা থানা দেখা যায়। আর সিটি করপোরেশন আমাদের দুর্ভোগ দিয়ে মজা পায়। আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতন নেয় আর আমাদেরই কষ্ট দেয়।’
সড়কে গরুর হাট বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে স্টিলমিল হাটের ইজারাদার মো. সাইফুদ্দিন লিজয় বলেন, ‘এই সড়কে ১৯৭৯ সাল থেকেই এভাবেই হাট বসানো হচ্ছে। এখানে গাড়ি চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দরকার হয় আপনি (প্রতিবেদক) এসে দেখে যান।’
ইজারায় উল্লেখিত নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া অন্য স্থানে হাট বসানো ইজারার শর্ত পরিপন্থী কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনকে ইজারার বাইরেও একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জামানত হিসেবে দিয়েছি। এই জামানত দেওয়ার কারণ সড়কের ক্ষয়ক্ষতির জন্য। আর কাউন্সিলর সাহেব এই সড়ক আগের তুলনায় বড় করেছেন এখন। তাই হাট বসাতে সমস্যা হয় না।’
তবে জামানত বাবদ কত টাকা দিয়েছেন তিনি তা জানাতে অসম্মতি জানান এই ইজারাদার।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এস্টেট অফিসার রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি বর্তমানে ঢাকায় রয়েছি। চট্টগ্রাম এসে সরেজমিনে হাটটি পরিদর্শন করবো।’
সড়কে হাট বসানোর নিয়ম আছে কিনা এবং জামানতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জামানতের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এটা হাইওয়ে রোড হলে পারবে না। ওটা তো মেইন রোড না। আর অনেকসময় মেইনরোড সংলগ্ন সড়কেও পশুর হাট বসে যায়। এগুলো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না আমরা। তবু দেখি কি করা যায়!’
এদিকে জামানত নয়, ইজারাদারের কাছ থেকে সংশ্লিষ্টরা সড়কে হাট বসাতে ‘চা-নাশতার খরচ’ নিয়েছেন বলে মনে করেন চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সড়কে হাট বসানোর বিষয়টি শুনেছি। তবে কোনো জামানতের বিনিময়ে নয়, এটি চা-নাশতার খরচ মনে করতে পারেন! এছাড়া ওটা মূল সড়কও না। তাই বসাতেই পারে।’
এ বিষয়ে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘কোনোভাবেই কোনো হাট রাস্তার ওপর আসবে না। যেখানে যে হাট অনুমোদন পেয়েছে সেখানেই থাকতে হবে। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে; তবে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। আমি সেখানে আমার পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেব।’