ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছাড়ছে
বরিশাল: বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রতিপক্ষের হামলায় আহতদের ঘটনায় হল ও ক্যাম্পাস ছেড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল থেকে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী হল ও ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছে বলে অধ্যক্ষ মো. খলিল উদ্দিন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে কলেজে আবাসিক ছাত্রদের উপর সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তার আতংকে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী হল ও ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে।
অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছি। তারপরেও বাইরে হামলার শিকার হওয়ার আশংকায় চলে গেছে। তাদের তো থামিয়ে রাখা যায় না।
অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে আবেদনও করা হয়েছে। তারাও নিরাপত্তা দিতে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তবুও শিক্ষার্থীরা চলে গেছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসেছে। তাদের পরিবারও আতংকে রয়েছে। পরিবারের চাপে হয়তো চলে গেছে।
সোমবারের হামলার ঘটনায় কোন অভিযোগ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, হামলায় আহত ৪ শিক্ষার্থী হাসপাতালে রয়েছে। তারা মামলা করবে কিনা, সেটা তাদের বিষয়। কলেজের পক্ষ থেকে করা হবে না।
শিক্ষার্থীদের পাঠদান সম্পর্কে অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থীরা ভোকেশনাল ও পলিটেকনিকের কোটা বাতিলের দাবিতে গত বুধবার থেকে আন্দোলনে রয়েছে। তারা পাঠদান থেকে বিরত ছিলো। বর্তমানে আতংকে চলে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে পারবো সেই নিশ্চয়তা নেই। তাই বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করে পরবর্তি সিদ্বান্ত নেয়া হবে। অনলাইনেও পাঠদানের ব্যবস্থা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ।
বিকেলে হল ত্যাগ করা শিক্ষার্থী সোহান, নাজমুল হাসান, তানিম হোসাইন ও সাবিনা ইয়াসমিন জানান, কলেজের ৬ ব্যাচে ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। আমরা সকলেই আতংকিত। কলেজ বন্ধ হয়নি। তবু হল ও ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ময়মনসিংহের বাসিন্দা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন।
হামলায় আহত শিক্ষার্থী আতিক শাহরিয়া বলেন, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভোকেশনাল ও পলিটেকনিকের কোটা বাতিলের দাবিতে গত বুধবার থেকে তারা আন্দোলন করছেন। সোমবার কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করতে এসেছিলো স্থানীয় সাংসদ। তার আগমন উপলক্ষ্ আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রেখে মিছিলে অংশ নিতে বলে কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সাকিব ভুইয়া।
তারা অংশ নিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিকেলে তর্ক-বির্তক হয়। তখন তাদের উপর হামলারও চেষ্টা করা হয়। এতে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার দেয়া হয়।
শাহরিয়ার অভিযোগ বলেন, ক্ষুদ্ধ সাকিব ভুইয়ার নেতৃত্বে কলেজের ১০/১২ শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত ২০/২৫ জন রামদা, ষ্ট্যাম্প, লাঠিসোটা নিয়ে রাত আটটার দিকে ছাত্রাবাসে হামলা করে। তারা অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে। এর মধ্যে তিনজন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। যদিও হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগের নেতা সাকিব ভুইয়া জানিয়েছিলেন, কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হতে দিতে চায়নি বিএনপি জামায়াতের একটি পক্ষ। তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে ম্যুরাল ভাঙার চেষ্টা করে। তখন প্রতিরোধ করলে মারামারি হয়েছে।
ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা গাছ ফেলে এক ঘণ্টা বরিশাল-ভোলা সড়ক অবরোধ করে জানিয়ে সদর উপজেলার চাদপুরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এইচএম জাহিদ বলেন, পরে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাতে পাওয়া ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক ও একটি ছাত্রবাসের ভেতরের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঘটনার আগ মুহূর্তে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনের ভোলা-বরিশাল মহাসড়কে বেশ কিছু মোটরসাইকেলে কিছু যুবক জড়ো হয়। এরপর পরই রামদাসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লাকড়ি, লাঠিসোটা নিয়ে কিছু যুবক ও খালি হাতে কিছু যুবক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।
পরবর্তীতে ছাত্রবাসের কোন একটি ফ্লোরে গিয়ে কতিপয় ছাত্রদের ওপর চড়াও হয় তারা এবং কুপিয়ে জখম করার চেষ্টার পাশাপাশি মারধরও করে। একইসময় কিছু যুবক একটি কক্ষের তালা ভাঙারও চেষ্টা করে আবার বেরিয়ে যায়। আবাসিক ছাত্ররা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বহিরাগতদের সঙ্গে কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সাকিব ভুইয়া, শাহারিয়ার তানভীর, আনাস রহমান, তাহসিন তন্ময়, ইরান, হিমু, পুলক, বেল্লালকে শনাক্ত করে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক স্টাফ জানান, স্থানীয় সাংসদ ক্যাম্পাসে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করেন সোমবার। এর আগে কলেজে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সাকিব ভুইয়া ও মাইন চৌধুরী সাধারণ শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা মিছিলে অংশ নিতে আহবান জানান। তখন একদল শিক্ষার্থী সাংসদকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করে। এ সময় মাইন চৌধুরী প্রতিবাদ করে। তখন তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে সাকিব ভুইয়ার নেতৃত্বে হামলা করা হয়।