‘ইনশাআল্লাহ’র ব্যবহার
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুমিন আল্লাহকে স্মরণ করে। প্রতিনিয়ত একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর ও ভরসা করে।
কথা ও কাজে ‘ইনশাআল্লাহ’ ব্যবহার ইসলাম ও মুসলমানদের সংস্কৃতি, যা আল্লাহ কোরআনে শিখিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, তুমি কখনো কোনো বিষয়ে এ কথা বোলো না যে, আমি এটি আগামীকাল করব—‘ইনশাআল্লাহ’ কথাটি না বলে।
যদি (কথাটি বলতে) ভুলে যাও, তাহলে (যখনই তোমার স্মরণে আসবে) তোমার রবকে স্মরণ কোরো এবং বোলো, সম্ভবত আমার রব আমাকে এর (গুহাবাসীর বিবরণ) চেয়ে সত্যের নিকটতর পথনির্দেশ করবেন। ’ (সুরা কাহফ, আয়াত ২৩-২৪)
‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দটি অনেক নবী ব্যবহার করেছেন
মুসলমানরা যেসব শব্দ বেশি ব্যবহার করে, তার মধ্যে একটি হলো ‘ইনশাআল্লাহ’। দেখা যায় আগের নবীদের জবানেও। পবিত্র কোরআন থেকে জানা যায়, কয়েকজন নবীও এ পরিভাষা ব্যবহার করতেন। আল্লাহর নবী ইয়াকুব, শোয়াইব, খিজির ও ইসমাইল (আ.) কথা বলার সময় ‘ইনশাআল্লাহ’ ব্যবহার করেছেন।
আল্লাহর নবী মুসা (আ.) সৃষ্টিজগতের গোপন রহস্য সংক্রান্ত বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করতে চাইলেন। এ লক্ষ্যে তিনি খিজির (আ.)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করার দরখাস্ত করেন। তখন খিজির (আ.) জবাবে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আমার সঙ্গে থাকার ধৈর্য আপনার নেই। ’ এ কথার জবাবে মুসা (আ.) বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ’ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। (সুরা কাহফ, আয়াত ৬৭-৬৯)
কোরবানির ঐতিহাসিক ঘটনা প্রায় সবার জানা আছে। ইবরাহিম (আ.) যখন তার ছেলে ইসমাঈল (আ.)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবেহ করছি। এবার চিন্তা করে বলো, তোমার অভিমত কী’ এমন ভয়ংকর স্বপ্নের কথা শুনেও ইসমাঈল (আ.) স্বাভাবিক স্বরে বলেন, “আব্বাজান! আপনি সেটাই করুন। ‘ইনশাআল্লাহ’ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। ” (সুরা সাফফাত, আয়াত ১০২)
‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দ ব্যবহারে সতর্কতা
কেউ যদি বলে, ‘ইনশাআল্লাহ’ ভালো আছি। তাহলে এ বাক্যটির ব্যবহার অশুদ্ধ হবে। কারণ, ‘ইনশাআল্লাহ’ ব্যবহার হয় কেবল ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে।
বৈধ কাজে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা ফজিলতপূর্ণ। এতে সওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু অবৈধ কোনো কাজ করার ব্যাপারে ‘ইনশাআল্লাহ’ জায়েজ নেই। চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ যাবতীয় অপরাধ ও অনৈতিক কাজে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা সম্পূর্ণ হারাম।
‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দ ব্যবহার যখন নিষিদ্ধ
কখনো আবার কিছু বৈধ কাজেও ‘ইনশাআল্লাহ’ ব্যবহার নিষিদ্ধ। যেমন আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করা যে, ‘হে আল্লাহ, তুমি চাইলে আমাকে অমুক জিনিসটি দান করো। তোমার মর্জি হলে আমাকে আরোগ্য দান করো। তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো ইত্যাদি। ’ এভাবে দোয়া করলে এক ধরনের অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রকাশ পায়। নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতা দেখা যায়।
মহানবী (সা.) হাদিসে বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দোয়া না করে যে, হে আল্লাহ, তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো। তুমি চাইলে আমার প্রতি দয়া করো। বরং দৃঢ়তার সঙ্গে দোয়া করো। কেননা আল্লাহ যা চান তা-ই করেন। তাকে বাধ্য করার মতো কেউ নেই। ’ (বুখারি ও মুসলিম)