ঈদ-নববর্ষ ঘিরে নগরে তিন স্তরের নিরাপত্তা
ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকছে চট্টগ্রাম নগর। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাদা পোশাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন (সিএমপি) পুলিশের টিম ও গোয়েন্দা বাহিনী মাঠে থাকবে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইন্স সম্মেলন কক্ষে এসব কথা বলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে নিরাপত্তা সমন্বয়ের কথা জানিয়ে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘কোনো অনুষ্ঠানই সন্ধ্যা ৬টার পর করা যাবে না। সেটা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। আমরা যেটা পরামর্শ দিয়েছি, অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণ করা। ক্ষেত্রবিশেষে মহিলা ও পুরুষের আলাদা যাতায়াতের পথ রাখা এবং নিজস্ব ভলান্টিয়ারস রাখা, যারা অংশগ্রহণ করবেন তারা অতিরিক্ত ব্যাগ-পুটলি নিয়ে আসবেন না। ক্লোজ সার্কিট ক্যামরা দেওয়া, তাহলে পরবর্তী কোনো ঘটনা ঘটলে সেটার অনুসন্ধানের জন্য কাজে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের পর পরই অনুষ্ঠান হওয়ার কারণে খুব কম সংখ্যক পুলিশ সদস্য ছুটিতে থাকবেন। এছাড়া যারা ছুটিতে থাকবেন তারা নববর্ষের আগেই চলে আসবেন। আর ঈদ-নববর্ষকে ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকবে। সাদা পোশাক, ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশের উপস্থিতি এবং টেকনিক্যাল সহযোগিতা নেওয়ার মাধ্যমে তিনস্তরের একটি নিরাপত্তা গ্রহণ করা হবে।’
কোনো ধরনের হুমকি আছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘কোনো ধরনের দৃশ্যমান ঝুঁকি নেই। তবে সতর্কতা আছে। অতীতের বিষয়গুলো মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমাদের ঝুঁকি নেই; তবে প্রস্তুতি থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবসময় সতর্ক আছি। সাময়িক সময়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে বিভিন্ন জায়গায়, তা আমাদের দৃষ্টিতে আছে। সেটার প্রেক্ষিতে কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করি, কোনো ধরনের বিপর্যয় হবে না। আর যদি কেউ বিপর্যয় ঘটাতে আসে; তাহলে আমরা সার্থকভাবে মোকাবেলা করতে পারবো।’
এছাড়া ঈদকে ঘিরে সিএমপির পক্ষ থেকে যেসব অনুরোধ জানানো হয়েছে। নগরবাসী যদি সেভাবে সহযোগিতা করেন তাহলে ফাঁকা নগরে সিএমপি থেকে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে; সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলে খারাপ কোনো কিছু ঘটার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।
এদিকে, ঈদের ছুটিতে বন্ধ থাকবে ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও। ফাঁকা নগরে বাসা ও আর্থিক এসব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকে ঘিরে ১২টি নির্দেশনা দিয়েছে সিএমপি। বাড়ি ফেরার আগে এসব নির্দেশনা অনুসরণের অনুরোধ করা হয়েছে।
নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে—
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। সংস্কৃতিজন কামরুল হাসান বাদল এতে আপত্তি জানালে সিএমপি কমিশনার নানা পারিপার্শিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এবার সিআরবির শিরিষতলায় নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম, ডিসি হিলে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব আয়োজন হবে। এর বাইরে রবীন্দ্রসঙ্গীত উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম প্রথমবারের মতো নগরীর এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ মাঠে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করেছে।
বাসিন্দাদের জন্য দেওয়া হয়েছে সাতটি নির্দেশনা—
বাসার দরজায় অধিক নিরাপত্তাসম্পন্ন অতিরিক্ত লক বা তালার ব্যবহার করা, নগদ অর্থ বা স্বর্ণালংকার ফাঁকা বাসায় রেখে না যাওয়া, সিসিটিভি ক্যামেরা ও অ্যালার্ম সিস্টেমের মতো প্রতিরোধমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া, আবাসিক এলাকায় রাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা, নতুন নিয়োগ দেওয়া নিরাপত্তাকর্মীদের এনআইডি কার্ড ও ছবি সংরক্ষণ করা, সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি ঘোরাফেরা করলে তাৎক্ষণিক স্থানীয় থানাকে জানানো ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯-এ কল করা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভল্টের নিরাপত্তা জোরদারসহ পাঁচ নির্দেশনা—
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা যাতে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন সে বিষয়টি তদারক করা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরের জন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে নিয়োজিত রাখা, ব্যাংকের ভল্টের চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরার কাভারেজ নিশ্চিত করা এবং সন্দেহজনক কোনো বিষয় নজরে এলে তা কাছের থানায় জানানো এবং ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ভালোভাবে কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করা।