চট্টগ্রামবিনোদন

উচ্ছেদের পথে চট্টগ্রাম শিশু পার্ক

নগরের কাজীর দেউড়ির চট্টগ্রাম শিশু পার্কটি উচ্ছেদের জন্য তোড়জোড় চলছে ৯ বছর ধরে। কিন্তু সেসময় ইজারার মেয়াদ শেষ না হওয়ায় উচ্ছেদের পথে এগুতে পারেনি জেলা প্রশাসন। এরমধ্যেই নিয়ম না মেনে ইজারা নবায়ন করে নিজ মন্ত্রণালয়ে জবাবের মুখে পড়ে চসিক। ইজারা বাতিল করে জায়গাটি উদ্ধারে নির্দেশনা দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকালে জায়গা উদ্ধার করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। এতোকিছুর পরও ‘অফিশিয়ালি’ কিছুই জানা নেই খোদ সিটি করপোরেশনের।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে প্রায় তিন একর জায়গার উপর শিশুপার্ক স্থাপনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। পরবর্তীতে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেয় চসিক। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ১৫ বছরের চুক্তি নবায়ন করে চসিক। তবে দ্বিতীয় বার চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান না করা, এমনকি চুক্তি নবায়নের আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও নেয়া হয়নি। যা স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ৭ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চসিকের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়। চিঠি পাওয়ার সাত মাস পর ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি এর জবাব দেয় চসিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পার্কের লিজ বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে সেটা জানি। কিন্তু বাতিল হয়েছে সেটা জানি না। আজকে শুনলাম জেলা প্রশাসন পার্কটি সিলগালা করে দিয়েছে। এটা তো অবৈধ কিছু না। আবার এটাও সঠিক যে জায়গাটার মালিক আমরা না। তবে আমরা চাচ্ছিলাম যে বিকল্প জায়গা পেলে তখন বাকি কাজটা হতো।’

এদিকে, সিটি করপোরেশনকে যেসব শর্তে শিশুপার্কের জায়গাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল তার ব্যত্যয় ঘটায় গত ২৩ ও ২৭ আগস্ট এবং ১৩ সেপ্টেম্বর তিন দফায় চিঠি দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। চিঠিতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থানকারী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় এবং যানজট নিরসনের জন্য শিশুপার্কের ইজারা বাতিলে জোর দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে চসিকের লিজ বাতিল করে জেলা প্রশাসনের অনুকূলে জায়গাটি বরাদ্দ চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব দেয় জেলা প্রশাসন। তবে এর আগে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও ‘আইনবহির্ভূতভাবে’ইজারা দেয়া হয়েছে দাবি করে শিশুপার্কের ইজারা বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়েছিলেন। যদিও সেসময় চসিকও উচ্ছেদের পক্ষে সমর্থন জানায় এবং ইজারাদারের সঙ্গে চুক্তি বহাল থাকায় বিকল্প জায়গা খুঁজছেন বলে জানিয়েছে চসিক।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিশু পার্কটির জেনারেল ম্যানেজার নাসির উদ্দিনের মন্তব্য জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

একই বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘জায়গাটার মালিক আমরা না। আমরা একজনকে লিজ দিয়েছি। সেনসিটিভ জায়গা বলে বিভিন্ন দপ্তর থেকে লিজ বাতিলের জন্য অনুরোধ আসছিল। তারমধ্যে আজকে সিলগালা করা হয়েছে। এটার সঙ্গে ব্যবসায়িক বিষয় তাছাড়া শিশুদের জন্য চট্টগ্রামে তেমন কিছুই নেই। এখন বিকল্প জায়গা খুঁজতে হবে।’

একই বিষয়ে জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, চসিককে অনুমতি দিলেও সর্বপ্রথম ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি সেনাবাহিনী নিজেদের জমি (পার্কের জায়গা) ফেরত চায়। তার পরের বছর ২০০৯ সালের ৬ মে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৃতীয় সভায় শিশু পার্কটি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও পর্যটন কর্পোরেশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ১৪ অক্টোবর চসিকের পক্ষ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে পত্র দিয়ে শিশু পার্ক তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়ার অনুরোধ জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d