উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে সিলেটে ফের বন্যা
সোমবার (১ জুলাই) সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। একই সঙ্গে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও অব্যাহত রয়েছে ভারী বর্ষণ।
ফলে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের প্লাবিত হয়েছে সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট এলাকার নিম্নাঞ্চল।
সোমবার (১ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত ভারি বর্ষণে নগরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে বাসা-বাড়িতে ওঠেছে পানি। এছাড়াও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন ফের ছুটছেন আশ্রয় কেন্দ্রে।
উজানে বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে লোভা ও ডাউকি নদীর পানি খরস্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে সিলেটে ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
এরই মধ্যে দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কানাইঘাটের সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি ভাঙন দিয়ে তীব্র গতিতে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের তথ্যমতে, ভারি বর্ষণে উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলাবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, যেসব ঘর বাড়িতে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের সময় নষ্ট না করে এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে তথা নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহবান জানান তিনি। এরই মধ্যে উপজেলায় ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ৪৭টি নৌকা মাঝিসহ টিম প্রস্তুত রাখা আছে।
গোয়াইনঘাটের জাফলং মামার বাজারের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া জানান, জাফলংয়ের ডাউকি নদীর পানি অনেক কম ছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে উজানে ভারত থেকে প্রবল বেগে পানি নেমে আসছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল (সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা) ৩৯.৬ মিলিমিটার। শুধুমাত্র আজ সকাল ৬ থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার। আর বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, চেরাপুঞ্জিতেও গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগেরদিন ৩০ জুন চেরাপেুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৮৬ মিলিমিটার। যে কারণে পাহাড়ি নদীগুলো দিয়ে ঢলের পানি নেমে আসছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)তথ্য মতে, সোমবার (০১ জুলাই) শনিবার সকালে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সন্ধ্যা ৬টায় বেড়ে ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। আর নতুন করে সুরমার নদীর পানি সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাট পয়েন্টে ফের বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং একই সময়ে সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সন্ধ্য ৬টায় বেড়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সারি নদীর পানি সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ কয়েকদিন কুশিয়ারা ব্যবতীত সব নদ নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছিল। কেবল কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামেনি একবারও। ফের বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানিও বেড়ে সিলেট অঞ্চলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় এখনো প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা। আর ফের ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে, সিলেট ছাড়াও সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি। এরইমধ্যে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। জেলার তাহিরপুর সড়কের বড় অংশ ফের তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রী ও এলাকাবাসীকে চলাচলে ব্যবহার করতে হচ্ছে নৌকা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, রোববার বিকেল চারটা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সিলেট বিভাগের ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি) থেকে অতি ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটারের ওপরে) বৃষ্টি হতে পারে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত জেলায় ১৩টি উপজেলায় এখনো ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের ২১৯টিতে আছেন ১০ হাজার ৯০৩ জন।