অর্থনীতিজাতীয়

উঠে গেল সীমা, সুদহার ঠিক করবে ব্যাংক

চার বছর পর সুদহার সীমা তুলে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক; ফলে এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) ঋণ ও আমানতের সুদহার নিজেরা ঠিক করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের এ সংক্রান্ত ঘোষণার চার দিনের মাথায় আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা চালুর এ সিদ্ধান্ত এল। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণে ‘স্মার্ট’ (সিঙ মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলস– স্মার্ট) ব্যবস্থা ‘প্রত্যাহার’ করে তা বাজারভিত্তিক করার নির্দেশনা দিয়েছে। এতে করে স্মার্ট রেট উঠে যাওয়ায় সুদহার ঠিক করতে ২০২০ সালের এপ্রিলের আগের অবস্থানে চলে গেল দেশের ব্যাংক খাত। খবর বিডিনিউজের।

বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের সুদহার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হল।’

এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো খাতভিত্তিক সুদহার ঘোষণা করবে। ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ঘোষিত সুদহারের সঙ্গে ১ শতাংশ বাড়িয়ে বা কমিয়ে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বাজারভিত্তিক সুদহার পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ায় ব্যাংকখাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের যোগান সাপেক্ষে ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পকের্র ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে বলে জানানো হয়।

২০২২ সালের জুলাই থেকে আগের নয়–ছয় তুলে দিয়ে স্মার্ট পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যবস্থায় স্মার্ট এর সঙ্গে একটি মার্জিন যোগ করে ঋণের সুদ ঠিক করতে পারত ব্যাংক। সময়ে সময়ে এ মার্জিন বাড়িয়ে–কমিয়ে সর্বশেষ করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ।

প্রতিমাসে স্মার্ট রেট প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের জুন ও জুলাইয়ে মাসে যা ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ এবং সবশেষ মার্চে যা ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এতে সাড়ে ১৩ শতাংশের বেশি সুদহার নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। ‘স্মার্ট’ প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাসে বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বেসিস পয়েন্ট বা ৪৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

এর আগে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সুদ হারের কোনো সীমা ছিল না। ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে আমানত ও ঋণের সুদহার র্নিধারণ করত বাণিজ্যিক ব্যাংক।

এতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায় খরচ বাড়ছে; এমন যুক্তি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সুদহার নামিয়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ ঠিক করে দেন। ওই বছরের এপ্রিল থেকে যা কার্যকর হয়। এতে সুদহার ২২ শতাংশ থেকে এক ধাক্কায় ৯ শতাংশে নামে। সুদহারের ওই সীমা বেঁধে দেওয়ার সমালোচনা করছিলেন অর্থনীতিবিদরা।

পরে মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার সামাল দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ নেওয়ার সময় সংস্থাটির শর্তে ঋণের সুদহারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে নেওয়া হয় গত বছরের জুলাইতে। চালু করা হয় ‘স্মার্ট’ রেট। আগের সিদ্ধান্তের ১০ মাসের ব্যবধানে আইএমএফের সুপারিশ মেনেই আবার সুদহার সীমা পুরোটাই তুলে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

সুদহার সংক্রান্ত আগের সকল সার্কুলার বাতিল করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকগুলো খাতভিত্তিক সুদহার ঘোষণা করবে। ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ঘোষিত সুদহারের সঙ্গে ১ শতাংশ বাড়িয়ে বা কমিয়ে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। সুদহার নির্দিষ্ট না পরিবর্তনশীল হবে তা গ্রাহকের বিপরীতে ঋণ মঞ্জুর করার সময়ে চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। পরিবর্তনশীল সুদহারের বেলায় বছরে সর্বোচ্চ কতবার ও কত শতাংশ বৃদ্ধি করা যাবে তাও চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হবে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিতরণ করা মেয়াদী ঋণের কিস্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সেটির উপর সর্বোচ্চ এক দশমিক ৫০ শতাংশ দণ্ডসুদ আরোপ করা যাবে। আর চলমান ও তলবি ঋণের বেলায় দণ্ডসুদ হবে সর্ম্পূর্ণ ঋণস্থিতির উপর। এর বাইরে কোনো প্রকার সার্ভিস চার্জ বা সুদ আরোপ করতে পারবে না ব্যাংকগুলো। আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে রাজধানীতে গত ৫ মে এক অনুষ্ঠানে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভনর্র আব্দুর রউফ তালুকদার।

তিনি বলেছিলেন, ‘সুদহার সীমা তুলে নেওয়া হবে। ব্যাংকগুলো চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ঠিক করবে। ঋণের সুদে কোনো বিধি নিষেধ থাকবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d