চট্টগ্রাম

ওদের টার্গেট বিদেশ ফেরত যাত্রী

কখনও তারা নিজেদের পরিচয় দেয় ডিবি, সাংবাদিক আবার কখনও কাস্টমস কর্মকর্তা। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের টার্গেট করে আটকে ছিনিয়ে নেয় মূল্যবান মালামাল। চট্টগ্রামে ডিবি পরিচয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ চক্রটির সন্ধান পেয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। রোববার সকাল পর্যন্ত নগরী ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– শাহাদাত হোসেন (৩৮), জাহাঙ্গীর আলম (৩৩), হানিফ ওরফে আসাদ (৩৮)।

সিএমপির সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) অতনু চক্রবর্ত্তী জানান, গত ২৫ মার্চ নূর উদ্দিন আশরাফী নামে এক ব্যক্তি কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ করেন– কয়েকজন যুবক নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে সিআরবি কাঠের বাংলো এলাকায় স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে নগরীর একটি মার্কেট থেকে দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে গত ২৮ মার্চ সিফাত ও তাসির নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। যারা মোবাইলগুলো সেখানে গিয়ে বিক্রি করেছিল বলে দোকানি জানিয়েছেন।

সহকারী কমিশনার অতনু বলেন, শনিবার গ্রেপ্তার শাহাদাত আগে গ্রেপ্তার হওয়া সিফাতের দুলাভাই। তিনিই (শাহাদাত) মূলত ছিনতাই করা মালামালগুলো সিফাতকে দিয়েছিলেন বিক্রি করতে। সিফাত ও তাসিরের দেওয়া তথ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শাহাদাত, জাহাঙ্গীর ও আসাদকে গ্রেপ্তার করে একটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিক্রি করা গলিত স্বর্ণের টুকরো এবং সেগুলো বিক্রির নগদ ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, এ চক্রের সদস্যরা নিজেদের সাংবাদিক, গোয়েন্দা পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয়। তাদের কেউ কেউ শাহ আমানত বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নিয়ে যাত্রীদের টার্গেট করে। টার্গেট করা যাত্রীর তথ্য তাদের অন্যান্য সহযোগীকে দিয়ে ওই যাত্রীর গাড়ির পিছু নেয়। তাদের সুবিধামত নির্জন স্থানে এসে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর গাড়ি আটকে পুলিশ কিংবা কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে উঠে পড়ে। তল্লাশির নামে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা–পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ কর্মকর্তা অতনু বলেন, গত ২৫ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যরা বায়েজিদ লিঙ্ক রোড এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তল্লাশির নামে একটি প্রাইভেট কার আটকায়। পরে সেটিতে উঠে মনসুরাবাদ গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়ার কথা বলে সিআরবির দিকে নিয়ে আসে। ওই যাত্রীরা তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে না নিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, এধরনের প্রশ্ন করার পর তারা সিআরবি কাঠের বাংলো এলাকায় মালামাল নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পেছনে থাকা মোটর সাইকেলে করে পালিয়ে যায়।

অভিযানে থাকা কোতোয়ালী থানার এসআই মোশারফ হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে এ চক্রটির সাথে আরও তিন থেকে চার জন জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি। ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এসআই মোশারফ বলেন, তাদের চক্রে বিপ্লব নামে আরও এক সদস্য আছে। সে বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিদেশ ফেরৎ যাত্রীদের তথ্য অন্যদের পাচার করে। পরে তারা ডিবি পুলিশ, কাস্টমস কর্মকর্তা কিংবা সাংবাদিক পরিচয়ে সংবাদ করার কথা বলে মালামাল হাতিয়ে নেয়। মোশারফ বলেন, ঘটনার দিন গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে গাড়িতে উঠে চালককে সরিয়ে দিয়ে আসনে বসে সাজ্জাদ। আর আসাদ ও পলাতক একজন পেছনের আসনে যাত্রীদের সঙ্গে বসে। আর জাহাঙ্গীর ছিলো পেছনের বাইকে। এসআই মোশারফ বলেন, শাহাদাত মাদক মামলায় সাজা পাওয়া আসামি। সে নগরীতে মোটর সাইকেল রাইড শেয়ারিং করে এবং নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। আসাদ এবং জাহাঙ্গীরও নিজেদের সাংবাদিক ও কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেয়। তাদের কাছ থেকে ‘স্বাধীন সংবাদ’, ‘বিবিসি প্লাস’ নামে কয়েকটি কার্ডও পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। মোশারফ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা আগেও গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি কাস্টমস কর্মকর্তা ও সাংবাদিক পরিচয়ে এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা কাউকে কিছু জানায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d