চট্টগ্রাম

‘ওরা চারজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে পাহাড়ি তরুণীকে’

উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকা এস এ কর্পোরেশনের ক্যাটারিং সার্ভিসের চার কর্মচারী পালাক্রমে তরুণীকে ‘ধর্ষণ’ করে। ‘ধর্ষণের’ সময় ক্যান্টিন বয় শরীফ মিয়া তরুণীর দুই হাত চেপে ধরে, জামাল জোরপূর্বক ‘ধর্ষণ’ করে। এ সময় ক্যান্টিন বয় রাশেদুল হক ওরফে রাশেদুল ইসলাম এবং আব্দুর রউফ রাসেল ক্যান্টিনের দরজায় পাহারা দেয়। পরে রাশেদুল, শরীফ ও রউফ একই কায়দায় পালাক্রমে তরুণীকে ‘ধর্ষণ’ করে। চট্টগ্রাম সিলেট রুটের আন্তঃনগর ট্রেন উদয়ন এক্সপ্রেসের ক্যান্টিনে বুধবার ভোরে ‘ধর্ষণের’ শিকার তরুণীর দায়ের করা মামলায় ঘটনার বিভৎস এ বর্ণনা উঠে আসে। ঘটনায় অভিযুক্ত থাকার অপরাধে চার ক্যান্টিন বয়কে আসামি করে গত বুধবার চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন ‘ধর্ষণের’ শিকার তরুণী।

মামলার আসামিরা হলেন, এসএ কর্পোরেশনের ক্যাটারিং সার্ভিসের ক্যান্টিন বয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদেশ্বরা গ্রামের বাছির মিয়ার ছেলে মো. জামাল (২৯), জামালপুরের কুলকান্দি মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে রাশেদুল হক ও রাশেদুল ইসলাম (২৮), জামালপুরের কুমারপাড়ার জালাল উদ্দিনের ছেলে শরীফ মিয়া (২১) ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কুতুবপুর গ্রামের গোলাম নবীর ছেলে আব্দুল রউফ রাসেল (২৮)।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) এস এম শহীদুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর পর অভিযুক্ত তিনজন এবং গতকাল (বৃহস্পতিবার) নোয়াখালীর কুতুবপুর থেকে রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার শিকার তরুণী জানান, তার নিজ বাড়ি বান্দরবানের রাজবিলায়। গত ২৩ জুন সিলেটে বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে দুইদিন থাকার পর গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) বাড়ি ফিরতে সিলেট রেল স্টেশনে গিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রেনের টিকেট পাননি। পরে ভাইয়ের বন্ধু উদয়ন এক্সপ্রেসের ক্যান্টিন বয় জামালের সাথে কথা বলে তরুণীকে উদয়ন এক্সপ্রেসের ক্যান্টিনে উঠিয়ে দেয় এবং জামালকে ৩’শ টাকা ভাড়া দিতে বলে। ক্যান্টিনে আরো ২০/২৫ জন যাত্রী ছিল। শ্রীমঙ্গল স্টেশন ছেড়ে আসার পর জামাল ৪’শ টাকা ভাড়া নেয়। কিছুক্ষণ পর রাশেদুল এসে চা’ কফি খাওয়াতে চাইলে তরুণী না করেন। ট্রেনটি আখাউড়া স্টেশনে পৌঁছালে ক্যন্টিন থেকে কিছু যাত্রী নেমে যায়। পরবর্তীতে কুমিল্লা এবং লাকসাম স্টেশনে পৌঁছার পর অধিকাংশ যাত্রী নেমে যায়। লাকসামের পর তরুণীসহ আরো চারজন যাত্রী ছিলেন। লাকসাম স্টেশন ছাড়ার পর ঘুমানোর কথা বলে দুই জন পুরুষ যাত্রীকে ক্যান্টিন থেকে বের করে দেয়। বয়স্ক এক মহিলা ও পুরুষ যাত্রী বিপরীত পাশে ঘুমাচ্ছিলেন।

তরুণী জানান, ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে (বুধবার) প্রথমে জামাল ও রাশেদুল পাশে বসে তাকে উত্যক্ত করে। পরে শরীফ ও রাসেল তাদের সাথে যোগ দেয়। হঠাৎ করে ক্যান্টিন বয় শরীফ মিয়া তার (তরুণীর) দুই হাত চেপে ধরে এবং জামাল তাকে জোরপূর্বক ‘ধর্ষণ’ করে। এ সময় রাশেদুল ও আব্দুল রউফ ক্যান্টিনের দরজায় পাহারা দেয়। জামাল সরে গেলে রাশেদুল, শরীফ ও রাসেল পালাক্রমে তাকে (তরুণীকে) ‘ধর্ষণ’ করে। এক পর্যায়ে রাসেলের সাথে তার ধস্তাধস্তি ও টানাটানি হলে ক্যান্টিনে ঘুমিয়ে থাকা দুই বয়স্ক যাত্রী জেগে উঠেন। তারা চিৎকার করলে চার ক্যান্টিন বয় সরে পড়ে। পরে ভোর ছয়টায় তরুণীর শনাক্তমতে জামাল, রাশেদুল ও শরীফকে আটক করে জিআরপি পুলিশ।

জিআরপি থানার ওসি শহীদুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর পরই অভিযুক্ত আব্দুল রউফ রাসেল পালিয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে নোয়াখলির কুতুবপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।এ ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d