অন্যান্য

কর্মমুখী প্রশিক্ষণেই ফিরেছে তাদের জীবনের চালিকা

জন্মগতভাবে নেই দু’চোখের আলো। যে কারণে বাবা-মা ধরেই নিয়েছেন অন্ধকার দু’চোখের সাথে মেয়ের জীবনটাও অন্ধকারে ঢেকে যাবে। কিন্তু একটি কর্মমুখী প্রশিক্ষণ চোখের আলো ফেরাতে না পারলেও জীবনের আলো ঠিক ফিরিয়ে দিয়েছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুরুন্নাহার তনিমাকে।

বর্তমানে তিনি নিজেই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। সেবা দিচ্ছেন হাজার মানুষকে। পাশাপাশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দাবা প্রতিষ্ঠানের সংগঠক হিসেবেও কাজ করছেন। আরেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শুভ্র তালুকদার। জন্মগত অন্ধ শুভ্র জানেন না আলো দেখতে কেমন হয়। কিন্তু আলোয় ভরা ছিল তার মন। সেখানে নিজে কিছু করার ছিল এক অধম্য ইচ্ছে শক্তি। সেই ইচ্ছে শক্তির জোর তৈরি হয়েছে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে। শিখেছেন কিভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই এখন শুভ্র নিজ জেলা বরিশালে পরিচালনা করছেন কাপড়ের ব্যবসা। তার প্রতিষ্ঠানে আবার কর্মসংস্থান হয়েছে আরো তিন জনের।

শুধু তাদেরই নয়, গত পাঁচ বছরে দৃষ্টি, বাক-শ্রবণ ও শারীরিক তিন শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখী করে তুলেছেন নগরীর দুই নম্বর গেট মেয়র গলি কর্ণফুলী টাওয়ারে প্রতিষ্ঠিত প্রতিবন্ধী মানুষের স্বাধীন জীবনযাত্রা কেন্দ্র ‘কৃষ্টি’।

সংগঠনটি ২০১৮ সাল থেকে সব ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষদের বিভিন্ন বিষয়ে কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করছেন। পাশাপাশি তরুণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষানবিশ হিসেবে এখানে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী তরুণরা পরবর্তী জীবনে কর্মক্ষেত্র, ব্যক্তি জীবনে সফলতার সাথে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে শিখেন।

কৃষ্টি’র সাধারণ সম্পাদক তাসনিন সুলতানা বলেন, ২০১৮ সাল থেকে কৃষ্টি সব ধরণের প্রতিবন্ধী মানুষসহ সকল মানুষের জন্য একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধী মানুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের বাংলা ইশারা ভাষা চর্চা ও ইশারা ভাষার দোভাষী সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের শিক্ষা প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সমাজে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও রাষ্ট্রীয় নানা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কাজ করে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়া-লেখার মাধ্যম ব্রেইল বই প্রকাশে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষদের বিশেষ করে প্রতিবন্ধী তরুণদের শিক্ষানবিশ কাজের সুযোগের মাধ্যমে তাদের কর্মক্ষম করে তুলে স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের উদ্ভুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সচেতন করতে নানা কর্মসূচি পালন করে। এছাড়া কৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিষয়ে নানা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষা বিকাশে ব্রেইল পদ্ধতি আধুনিকায়নে গবেষেণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটি দেশব্যাপী সরকারি বিশেষ ৫ স্কুল, সরকারের রিসোর্স কর্মসূচির আওতায় ৬৪ জেলায় ৬৪টি স্কুল এবং আরো ১০টি স্কুলে ৩ শতাধিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d