চট্টগ্রামপার্বত্য চট্টগ্রাম

কাপ্তাই হ্রদে চাপিলা-কাচকি, বড় মাছের আকাল

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে রুই জাতীয় বড় মাছ দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। আর বাড়ছে ছোট মাছের সংখ্যা। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো বিনষ্ট হওয়ার কারণে রুই মাছ কমেছে বলে মনে করছে মৎস্য গবেষণা বিভাগ।

১৯৬২ সালে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাঁধ নির্মাণ হলে রাঙামাটির বিশাল এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় কাপ্তাই হ্রদ। হ্রদ সৃষ্টির পর ১৯৬৪ সালে হ্রদে ৭৬ প্রজাতির, ১৯৮৬ সালে ৭২ প্রজাতির, ১৯৯১ সালে ৭১ প্রজাতির, ২০০৩ সালে ৭৫ প্রজাতির এবং ২০২৩ সালে ৮০ প্রজাতির মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে।

তবে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন বলছে, শুরু থেকে এ পর্যন্ত হ্রদ থেকে ৪২ প্রজাতির মাছের বিপণনের হিসেব রয়েছে তাদের তাছে। বর্তমানে হ্রদ থেকে মাত্র ১২ প্রজাতির মাছ বাণিজ্যিকভাবে আহরণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, কাপ্তাই হ্রদে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাঁচা, পাবদা. চিতল, দেশি মাগুর, বাতাসি ট্যাংরা এবং বাটা মাছ ক্রম হ্রাসমান। প্রায় বিলুপ্তির পথে ঘনিয়া, খরশুলা, পোয়া, চ্যাং, বামস ঘাউরা, বাঘাইড়।

বিলুপ্ত হয়ে গেছে শিলন, দেশি সরপুঁটি, মোহিনী বাটা, দেশি পাঙ্গাস, মহাশোল, মধু পাবদা এবং ফাইস্যা।

বড় মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ছোট মাছের আধিক্যই বেশি বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে হ্রদে ছোট মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে কাচকি, চাপিলা, কাঁটা মইল্যা, দেশি মলা।

হ্রদে মজুদ করা মাছের মধ্যে রয়েছে- গ্রাস কার্প, সিলভার কার্প, কার্পিও, রাজপুঁটি, তেলাপিয়া, মহাশোল, আফ্রিকান মাগুর, থাই পাঙ্গাস এবং সাকার মাউথ ক্যাটফিস। এর মধ্যে আটটি বিদেশি প্রজাতির মাছ রয়েছে।

মৎস্য ব্যবসায়ী মো. বুলবুল হোসেন বলেন, বিগত ২৫ বছর ধরে আমি মাছের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দিনদিন হ্রদে বড় মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। মূলত হ্রদে ড্রেজিং না করা এবং মৎস্য শিকারিদের সচেতনতার অভাবে বড় মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, কাপ্তাই হ্রদের অনেকটা দখল হয়ে গেছে। হ্রদে পলি জমে ভরাট হচ্ছে। এক সময় কাপ্তাই হ্রদে বড় বড় এবং সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে তা অনেক কমে গেছে।

এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, হ্রদটি আমাদের দেশের, রাষ্ট্রের সম্পদ। দ্রুত হ্রদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনে মাছের উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে এখানকার মৎস্য সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, কাচকি এবং চাপিলা পুরো বছর সময় ধরে ডিম দেয়। এসব ছোট মাছ সংখ্যায় অনেক বেশি, তাই এসব মাছ অনেক খাবার খেয়ে ফেলে। এতে অন্য মাছ তেমন খাবার পায় না। ফলে অন্যান্য প্রজাতির মাছ তেমন বড় হচ্ছে না।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) রাঙামাটি নদী-উপকেন্দ্রের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার বলেন, কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হওয়ায় এবং দূষণ বাড়ায় রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো দিনদিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া রাক্ষুসে মাছের উৎপাদন না থাকায় চাপিলা এবং কাচকি মাছের প্রজনন বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পাশে কৃত্রিম পদ্ধতিতে হ্যাচারি স্থাপন করে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে।

জেলার সচেতন মহল বলছে, হ্রদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে হ্রদে ড্রেজিং, অসাধু চক্র, দূষণ, দখল রোধের বিকল্প নেই। এসব রোধ করতে পারলে দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য ভাণ্ডার হবে কাপ্তাই হ্রদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d