কাল থেকে আরও আক্রমণাত্মক হতে চায় বিএনপি-জামায়াত
আগামীকাল থেকে আবার শুরু হচ্ছে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি তাদের মহাসমাবেশ থেকে তাণ্ডব চালায়। একজন পুলিশ কনস্টেবলকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ চালায়। আক্রমণ চালায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা পরিবহন বাস সহ বিভিন্ন পরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এরপর ২৯ অক্টোবর হরতাল ডাকে এবং হরতালেও ভাঙচুরের ধারা অব্যাহত রাখে। ৩১ অক্টোবর থেকে বিএনপি ৩ দিনের জন্য অবরোধ ডেকেছিল। কিন্তু সেই অবরোধ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। জনগণ অবরোধকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ, ভাঙচুরের ঘটনা এবং ঢাকার বাইরে কয়েকটি স্থানে সহিংসতা ছাড়া তেমন কোনও বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের প্রভাব জনজীবনে তেমন পড়েনি। এ রকম পরিস্থিতিতে আবার আগামীকাল থেকে অবরোধের কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে বিএনপি।
যেহেতু ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ অসফল হয়েছে, কাজেই আগামী অবরোধ কেমন হবে এ নিয়ে জনগণের মধ্যে নানামুখী আলাপ আলোচনা রয়েছে। জনগণ এখন এ ধরনের কর্মসূচি মোটেও পছন্দ করে না। জীবন জীবিকার কাজে ব্যস্ত সাধারণ মানুষ, হরতাল অবরোধের কর্মসূচিকে এখন প্রত্যাখ্যান করছে। মানুষ ঝুঁকি নিয়ে হলেও কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ছে এবং আস্তে আস্তে জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি আগামীকাল থেকে যে অবরোধ তা আরও আক্রমণাত্মক করতে চায়।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, জামায়াতকে সাথে নিয়ে তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পিকেটিং করবে, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করবে। বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হল অবরোধের মধ্যে কিছু বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা। যেন আন্তর্জাতিক মহলের কাছে এরকম একটি বার্তা যায় যে পুলিশ তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছে। পুলিশ তাদেরকে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করতে দিতে রাজি না। এটি প্রমাণের জন্যই তারা গুপ্ত হামলা, নাশকতাসহ বিভিন্ন ধরনের তৎপরতায় নিজেদের জড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপির বিভিন্ন সূচকগুলো বলছে যে, আগামীকাল থেকে যে অবরোধ শুরু হবে সেই অবরোধে বিএনপির নেতাদের পিকেটিং বা রাজপথে অবস্থান বৃদ্ধি করা হবে। তারা বিভিন্ন পয়েন্টে থেকে পরিবহণ ব্যবস্থা বিঘ্ন সৃষ্টি করতে চেষ্টা করবে। এছাড়াও তারা কিছু সরকারি স্থাপনায় হামলা করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
গত ৩টি অবরোধ যেমন বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি, এবার তার বিপরিত চিত্র আনার জন্য তারা চেষ্টা করছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছে।
তাছাড়া বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে অবরোধের কার্যকারিতাও এখন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। যে সমস্ত নেতারা আছেন, তারা নেতৃত্ব দিয়ে কর্মীদের মাঠে নামাবেন এমন পরিস্থিতি নেই। এর ফলে বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হবে গুপ্ত হামলা এবং বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা আক্রমণ। এছাড়া অবরোধ করে অবরোধ থেকে কোনও সুফল বিএনপি পাবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের গুপ্ত হামলা বা ঝটিকা আক্রমণ করলে বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারাবে এবং তারা ক্রমশ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবেই আবির্ভূত হবে।