চট্টগ্রাম

কুমিরায় রেলের জমি দখলের পায়তারা, ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ

সীতাকুণ্ডে লিজ না নিয়ে রেলওয়ের প্রায় ২০০ কোটি টাকার ৫০ একর জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রভাবশালী এক ভূমিদস্যুর নেতৃত্বে বাড়িঘর ভেঙে বেআইনিভাবে কলোনি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে প্রায় ৫০০ পরিবারকে।

জানা গেছে, ৪ নম্বর কুমিরা ইউনিয়নের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ের কুমিরা স্টেশনের উত্তরপাশে রেলওয়ে কলোনিতে প্রায় ৫০ একর জায়গা লিজ নিতে একটি প্রভাবশালী মহল আবেদন করে। অনুমতি না পাওয়ার পরেও সেখানে বসবাসরত প্রায় ৫০০ পরিবারকে বিগত ১ সপ্তাহ যাবৎ প্রতিদিন কুমিরা এলাকার প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যু মহসিনের নেতৃত্বে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী জোরপূর্বক তাদেরকে উচ্ছেদ করে।

এখনও কলোনিতে অবস্থান করা রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী রমনী কুমার নাথ (৬২) বলেন, আমাকে জোরপূর্বক এখান থেকে তুলে দিতে চায়। এখানে বসবাস ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা নেই।

তার মেয়ে স্বপ্না রানী (৪২) জানান, আমার বাবা ৪০ বছর পর রেল থেকে অবসর নেন এবং আমার দাদা চিন্তা হরন নাথও রেলওয়ে চাকরি করে অবসরে যান। আমার দাদার সময় থেকেই আমরা এখানে বসবাস করে আসছি। আমরা নদীভাঙ্গা মানুষ এবং দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এই জায়গায় আমাদের বসবাস। তারা জোরকরে আমাদেরকে সরাতে চায়। আমাদেরকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এখান থেকে চলে যেতে। কিন্তু আমরা এখান থেকে যাব কোথায়? এই জায়গা ছাড়া আমাদের আর কোনো ঠাঁই নেই।

আশেপাশের স্থানীয়দের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলেন, মহসিনের দাপটে রেলওয়ের কলোনি থেকে বাসিন্দারা চলে যেতে বাধ্য হয়। সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দিন-রাত হুমকির মাধ্যমে তাদেরকে ঐ জায়গা ছাড়তে বাধ্য করে। কার ইশারায়, এতগুলো লোকের সর্বনাশ করল? উচ্ছেদকৃত এতগুলো পরিবারের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার কী হবে?

এদিকে উচ্ছেদের পর মহসিন সেখানে নতুন একটি অফিস করে। সেখানে ‘এগ্রিকালচার এগ্রো’ নামে কয়েকটি সাইনবোর্ড লাগায়।

কুমিরা স্টেশনমাস্টার সাইফুদ্দিন বশরকে লিজের দেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, মহসিন লিজের জন্য আবেদন করে। কিন্তু অনুমতি পায়নি এবং রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডিআরএম স্যার ও স্টেট অফিসার স্যার এসে নতুন অফিসটি ভেঙে দিয়ে সাইনবোর্ড গুলো তুলে নিয়ে যায়। জায়গাটির বর্তমান মূল্যে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা।

৭ নম্বর কুমিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোরশেদ হোসেন চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ বলে আমি মনে করি। কারণ, উচ্ছেদ হওয়া লোকগুলো বেশিরভাগ নদীভাঙ্গা , কেউ ভূমিহীন, কেউ দিনমজুর। তাই এদেরকে উচ্ছেদ করার আগে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d