ধর্ম

কেবল আমল দিয়েই জান্নাত লাভ সম্ভব?

মানুষ একটু বেশি আমল করলে নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা ভাবতে শুরু করে। কোনো ক্ষেত্রে তারা অন্যদের খুব খাটো নজরে দেখতে শুরু করে। এটা মোটেই ঠিক নয়। কারণ মানুষ শুধু আমলের ওপর ভর করে জান্নাতে যেতে পারবে না।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কোনো ব্যক্তিকে তার নেক আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। লোকজন প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেও নয়? তিনি বলেন, আমাকেও নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে তাঁর করুণা ও দয়া দিয়ে আবৃত না করেন। কাজেই মধ্যমপন্থা গ্রহণ করো এবং নৈকট্য লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাও। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা সে ভালো লোক হলে (বয়স দ্বারা) তার নেক আমল বৃদ্ধি হতে পারে। আর খারাপ লোক হলে সে তওবা করার সুযোগ পাবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৭৩)

উপরোক্ত হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে মানুষ নিজের যোগ্যতা ও আমল নয়, বরং আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহেই নাজাত পেতে পারে। মুমিনের একমাত্র সম্পদ আল্লাহর রহমত।

আল্লাহর রহমতের আশাই আমাদের পাথেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ! আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। সন্দেহ নেই, আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)

তবে মনে রাখতে হবে, নিজের সাধ্যটুকু বিলিয়ে দিয়ে আশা পোষণ করতে হবে।

বীজ বপন না করে চারাগাছের আশা করা যেমন নির্বুদ্ধিতা, তেমনি নেক আমল না করে এবং গোনাহ না ছেড়ে তওবা না করে পরকালীন মুক্তির জন্য আল্লাহ পাকের রহমতের আশায় বসে থাকাও তেমনি বোকামি। আবার অনেক নেক আমল করে তা নিয়ে অহংকার করা আরো বড় বোকামি। কারণ সর্বপ্রথম অহংকার করেছিল অভিশপ্ত শয়তান। অহংকার করে সে চিরদিনের জন্য আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কাজেই মানুষের মধ্যে অহংকারী মনোবৃত্তি শয়তানি চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের চরিত্র মানুষের জান্নাতে যাওয়ার পথকে বন্ধ করে দেয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে সরিষার দানা (সামান্যতম) পরিমাণও অহংকার আছে, সে (প্রথম পর্যায়েই) জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং যার অন্তরে সরিষার দানা (সামান্যতম) পরিমাণ ঈমান আছে সে জাহান্নামে (স্থায়ীভাবে) প্রবেশ করবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৯)

তাই আমাদের উচিত, নিজেদের সামান্য আমলেই অহংকারী না হয়ে সর্বদা আল্লাহর দরবারে তওবা করা। অন্যকে আমলের দিক থেকে ছোট না ভেবে নিজের আমলকে কলুষমুক্ত করার চেষ্টা করা। কারণ মহান আল্লাহ কাকে কোন অসিলায় নাজাত দেবেন তা তিনি নিজেই জানেন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d