খাগড়াছড়ির গুইমারায় ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে, সড়কে যানজটে ভোগান্তি
খাগড়াছড়ির গুইমারা বাজারের বেশির ভাগ ফুটপাত দিয়ে হাঁটার কোন উপায় নেই।খাগড়াছড়ি-চট্রগ্রাম সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে ব্যবসায়ীদের বেশকিছু অবৈধ দোকান-স্থাপনা। আর ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে থাকায় পথচারীরা বাধ্য হন রাস্তায় নেমে চলতে।যত্রতত্র ট্রাক, পিকাপ, জিপ গাড়ি পার্কিং তো রয়েছেই।এর উপর রয়েছে ব্যবসায়ীদের গ্যাস সিলিন্ডার, পিলার, পানির ট্যাংক, লোহার বিভিন্ন মালামাল, চারা ব্যবসায়ীর গাছ, আখসহ চায়ের দোকান ও খড়ির স্তুপ। আবার অনেক দোকানের মালামালও ফুটপাতে ঠাঁই পেয়েছে।
এতে করে তীব্র যানজট নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ এলাকায় । এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ও স্কুল-মাদরাসাগামী ছাত্রছাত্রীরা।
গুইমারায় সড়কের পাশেই অবস্থীত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজিয়েট উচ্চ বিদয়ালয়সহ রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের একটি আবাসিক স্থাপনা । এছাড়াও পাশাপাশি রয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফুটপাত অবৈধ দখলে থাকার কারণে বিদ্যালয় গামী শিক্ষার্থীরা চলতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। যানজটের ভোগান্তিতে পড়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগিরা। অথচ ফুটপাত দখল করে দীর্ঘ কাল ব্যবসা করছে ব্যবসায়ীরা।
সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার হাটবার। বেশ লোকসমাগম হয় এ বাজারে। বাজারটি বেশ পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী বাজার। হাটবারে দূর দূরান্তের পাহাড়ে উৎপাদিত কৃষি পণ্যসহ নানান কিছু বিক্রি করতে আসা লোকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাড়াঁতে হয় মূল সড়কের পাশে। আবার বেপারিদের ক্রয়কৃত পণ্যও রাখতে হয় মূল সড়কের পাশে। মূল সড়কের পাশে পার্কিং করে পণ্য বোঝাই করতে হয় ট্রাক বা পিকাপে। এ কারণে হাটবারে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। সড়ক ও ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সেগুলো যাতে দখল না হয়, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগীরা।
স্বরজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশত শত বছর আগে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এই গুইমারা বাজারটি। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ সমৃদ্ধ বাজারটি। শুধু গুইমারা এলাকার নয়, খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ এ বাজারে কেনাকাটা করতে আসেন। ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে এ বাজারের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে । কিন্তু সপ্তাহিক হাটবারে বাজারের গলি আর মূল সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সকল শ্রেণিপেশার নাগরিকদের।
জেলার মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি, পানছছড়ি, দীঘিনালা উপজেলার লোকজনের জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকা যাতায়াতের একমাত্র সড়ক হিসেবে ব্যবহার করতে হয় গুইমারা বাজারের সড়কটি। যার কারণে জরুরি চিকিৎসাগামী রোগীসহ যাতায়াতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অন্য উপজেলার লোকজনকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা বলেন, ফুটপাত নাগরিকদের হাঁটার সুবিধার্থে তৈরি হলেও গুইমারা বাজারের ফুটপাতে মানুষের হাঁটা এখন দুঃসাধ্য এক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধভাবে নির্মাণসামগ্রী রাখা এবং ফুটপাত দখল করে পসরা সাজিয়ে বসা, এটা যেন তাদের নিজস্ব এক নিয়মেই পরিণত হয়েছে। বাধ্য হয়ে আবাসিকে থাকা কোমলমতি শিশু ও তিনটি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ত সড়কের ওপর দিয়ে হাঁটতে হয়। তিনি আশা করছেন উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এর একটি সমাধান হবে।
সাবেক ইউপি সদস্য উলাপ্রু মারমা বলেন, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার কারণে যানবাহনগুলো সড়কের ওপরেই রাখাতে হয়। এর ফলে যানজট, দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ এখন নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। যাদের দেখার দায়িত্ব তাদের উদাসীনতার কারণে সড়কে শৃঙ্খলা নেই।
পথচারী অনিক পাটোয়ারি জানান, সাপ্তাহিক হাটবারে অনেক দূর থেকে লোকজন বিক্রির জন্য পণ্য নিয়ে আসে। ফুটপাত দখলে থাকায় তাদের রাস্তায় বসতে হয়, এতে করে যানজট তৈরি হয়। কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই ফুটপাত দখল করে রেখেছে। কেউ কিছু বলছে না, সবাই নির্বিকার।
আরেক পথচারী আ. মতিন জানান, ব্যবসায়ীরা এই ফুটপাত গুলো দখল করে রাখার কারণে স্কুলগামী ছেলে-মেয়েরা মূল সড়ক দিয়ে হাটঁতে হয়।এছাড়াও হাটবারে প্রচুর যানজট সৃষ্টি হয়। এ সমস্যাটা গুইমারার জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।অপরদিকে ফুটপাত দখলকারী পান্নালাল চাকমা জানান, বাজারে ব্যবসার জন্য অন্য কোথাও জায়গা না পাওয়ায় তারা এখানে বসে ব্যবসা করেন। অন্য কোথাও স্থান পেলে তারা চলে যাবেন।
বাজার পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিপ্লব শীল জানান, ফুটপাত দখল আর যানজটের সমস্যা নিরসনের বিষয়ে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে একটা কমিটি হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে কমিটি কাজ করছে।
এবিষয়ে গুইমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমা মাসিক নিরাপত্তা মিটিংয়ে বলেন, ফুটপাত দখল আর যানজট নিরসনে উপজেলা পর্যায়ে একটা টিম গঠন করা হয়েছে। অচিরেই এর সমাধান হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব চৌধুরীর জানান, আইন অমান্য করে যারাই ফুটপাত দখল করবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে বাজার পরিচালনা কমিটি সহযোগিতা চাইলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন এ ফুটপাত দখলদার মুক্ত করতে তৎপর রয়েছে।