খেলাপি ঋণের ১% নগদ আদায় করতে হবে
ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে দ্রুত আদায় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির মধ্যে কমপক্ষে ১ শতাংশ নগদ আদায় করতে হবে। একই সঙ্গে আদালতের বাইরে গিয়ে দুই পক্ষের মধ্যস্থতার মাধ্যমে দ্রুত ঋণ আদায় করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষকে প্রচলিত নীতিমালার আওতায় ছাড় দিয়ে সমঝোতায় আসতে হবে। খেলাপি ঋণের আদায় বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ বিষয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমাতে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এতে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আদালতের মাধ্যমে আদায়ের প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। এ কারণে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানো যাচ্ছে না। খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এতে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে মোট খেলাপি ঋণস্থিতির কমপক্ষে ১ শতাংশ নগদ আদায় করতে হবে। বর্তমানে খেলাপি ঋণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এর ১ শতাংশ নগদ আদায় করলে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় হবে। এর বাইরে ঋণ অবলোপনসহ অন্যান্য খাত মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। এগুলো আদায়ের ব্যাপারে এতে কিছু বলা হয়নি। তবে এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারে অবলোপন করা ঋণ আদায়ে ব্যাংককে আলাদা ইউনিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
সার্কুলারে বলা হয়, খেলাপি ঋণ আদায়ে দীর্ঘসূত্রতা পরিহারের লক্ষ্যে মধ্যস্থতার মাধ্যমে আদায় বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য নোটিশে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বা সদিচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিতে হবে। ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয় পক্ষের সম্মতিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আর্বিটেশন সেন্টারসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইনজীবী বা অন্য যে কোনো উপযুক্ত ব্যক্তি, যাদের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে সফলতার ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে, তাদেরকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে নিয়োগ করা যাবে। মধ্যস্থতাকারী নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিরোধীয় পক্ষ ও মধ্যস্থতাকারী পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পারিশ্রমিকের পরিমাণ, পরিশোধকারী পক্ষ ইত্যাদি নির্ধারণ এবং যথাসময়ে তা পরিশোধ নিশ্চিত করতে হবে। মধ্যস্থতাকে সফল করা এবং খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে বিদ্যমান নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক কর্তৃক ছাড় প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে।
মধ্যস্থতার মাধ্যমে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী শাখা বা সংশ্লিষ্ট টিমকে স্বীকৃতি প্রদান বা পুরস্কৃত করার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা রেখে ব্যাংকগুলো বিদ্যমান আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারবে। মধ্যস্থতায় ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি অনুসরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১ শতাংশ নগদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। প্রতি ষাণ্মাসিকে অনুষ্ঠিত পরিচালক পর্ষদের সভায় এ সংক্রান্ত অগ্রগতিবিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হবে। পরিচালক পর্ষদ আদায় অগ্রগতির বিষয়ে অবগত হয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে।
মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। মধ্যস্থতা ফলপ্রসূ না হলে এবং সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষ আগ্রহী হলে আর্বিটেশন প্রক্রিয়ায় যেতে পারে। স্বল্প সময়ে এবং পূর্বনির্ধারিত পদ্ধতিতে আর্বিটেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে।
অপর এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন খাতে মানোন্নয়ন ও পারিশ্রমিক প্রদান কমিটির কার্যক্রম ব্যাংকের অডিট কমিটির ওপর দায়িত্ব দিয়েছে। তারা এ কার্যক্রম সম্পন্ন করে পর্ষদের অনুমোদন নেবে।