গাজায় এক দিকে ত্রাণ সরবরাহ, অন্যদিকে বিমান হামলা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য মিসর থেকে একে একে পৌঁছায় ত্রাণবাহী ২০টি ট্রাক। সেগুলো থেকে নামানো হয় ত্রাণসামগ্রী। এরপর তা নিয়ে উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যায় ফিলিস্তিনি ট্রাকগুলো। এরই মধ্যে গাজার বিভিন্ন স্থানে চলছিল ইসরায়েলের বাছবিচারহীন বোমা হামলা, আহত ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদ আর হতাহতদের স্বজনদের আহাজারি।
শনিবার মিসর–গাজা সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং এলাকায় দেখা যায় গাজার বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণবাহী ট্রাকের ছুটে চলার দৃশ্য। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের বিরামহীন বিমান হামলার ১৫ দিনের মাথায় প্রথমবারের মতো ত্রাণসহায়তা পেলেন গাজার বুভুক্ষু বাসিন্দারা। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় যে সহায়তা যাচ্ছে, তা ‘মহাসাগরে এক ফোঁটা পানির’ মতো।
৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এর জবাবে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ১৫ দিন ধরে তছনছ গাজা। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে খাবার, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য চলছে হাহাকার। এ অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে মিসর সীমান্তে অপেক্ষায় ছিল বহু ট্রাক। তবে ইসরায়েলের অসম্মতি ও হামলার কারণে সীমান্ত খুলে দেওয়া যায়নি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যে একটি চুক্তিতে প্রতিদিন ত্রাণবাহী ২০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ত্রাণ হিসেবে গাজায় পৌঁছায় খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। ইসরায়েলের বাধায় এই সহায়তার মধ্যে কোনো জ্বালানি ছিল না। অথচ হাসপাতালগুলো সচল রাখতে এ জ্বালানি হয়ে পড়েছে অপরিহার্য। অপ্রতুল ত্রাণ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, সংঘাত শুরু হওয়ার আগে গাজার বাসিন্দারা প্রতিদিন যে সহায়তা পেতেন, তার মাত্র ৩ শতাংশ গতকাল সেখানে প্রবেশ করেছে।
আর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ত্রাণ থেকে জ্বালানি বাদ দেওয়ার অর্থ, ইসরায়েলের হামলায় আহত ও অন্য রোগীদের জীবন আগের মতোই ঝুঁকিতে থেকে যাবে। কারণ, গাজার হাসপাতালগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো জ্বালানি নেই।
গাজার বাসিন্দাদের হাতে এ ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছে জাতিসংঘ। ত্রাণের অপ্রতুলতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কর্মকর্তা জুলিয়েট টোউমা। শনিবার তিনি বলেন, গাজায় প্রবেশের জন্য রাফাহ ক্রসিংয়ে যে ত্রাণ অপেক্ষা করছে, তা ‘মহাসাগরে এক ফোঁটা পানির’ মতো। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় প্রতিদিন অন্তত ১০০ ট্রাক ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন। সংঘাত শুরুর আগে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ ট্রাক ত্রাণ পেতেন গাজাবাসী।
এদিকে গাজায় অব্যাহত হামলার প্রতিবাদে দেশে দেশে চলছে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ। শনিবার ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়। লন্ডন পুলিশ জানিয়েছে, মিছিলে প্রায় এক লাখ মানুষ অংশ নেন। মিছিলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চেয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।