আন্তর্জাতিক

গাজায় নিহত ৮ হাজার ছাড়াল

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি শিশু। এছাড়া এ বর্বর হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯ হাজার ৭৩৪ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল ৫৩টি গণহত্যা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধের মধ্যে থাকা গাজায় ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনি উপত্যকা। এমন অবস্থায় সেখানে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক জরুরি সংস্থাগুলোর জন্য ইন্টারনেট সেবা স্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছেন স্টারলিংকের কর্ণধার ইলন মাস্ক। তবে মাস্ককে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে সব চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুক্রবার গাজা উপত্যকায় তাদের বিমান ও স্থল হামলা বৃদ্ধি করেছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো বলেছে যে ইসরায়েল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার পরে গাজায় তাদের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলা ও অবরোধের কারণে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা খাদ্য, পানি এবং ওষুধের সংকটে ভুগছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অবিলম্বে একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। ১২০টি দেশ জর্ডানের এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ইসরায়েল অবশ্য তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

অপরদিকে যুদ্ধে ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা ১,৪০০ জনেই রয়েছে। হামাস ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের পর আর তেমন কোনো আক্রমণ করেনি।

এদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায় শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে তীব্র লড়াই হয়েছে বলে দাবি করেছে ফিলিস্তিনির সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডস।

সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলি সৈন্য ও ট্যাঙ্ক গাজায় প্রবেশ করলে উত্তর গাজার বেইত হানুন এবং মধ্য গাজার বুরেজের কাছে ভয়াবহ যুদ্ধ হয় বলে হামাসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে যে গাজা উপত্যকায় তাদের স্থল অভিযান চলছে, তাদের সামরিক বাহিনী যুদ্ধের পর্যায়ে অগ্রসর হচ্ছে। শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পদাতিক, সাঁজোয়া, প্রকৌশল এবং আর্টিলারি বাহিনী এ সামরিক অভিযানে অংশ নিচ্ছে। একইসাথে ইসরায়েলি বিমান থেকে ভারী গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।’

তবে এ স্থল অভিযান নিয়ে গাজায় জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের পরিবারগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, ‘হামাসের হাতে বন্দী থাকা ইসরায়েলিদের আত্মীয়-স্বজনরা শনিবার গাজা উপত্যকায় তীব্র বোমা হামলা এবং ওই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থল আক্রমণের বিষয়ে তাদের “উদ্বেগ” প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলিরা তাদের সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছে।’

বন্দী ও নিখোঁজ ইসরায়েলি পরিবারগুলোর ফোরাম থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হামাসের হাতে বন্দী থাকা ইসরায়েলিদের আত্মীয়-স্বজনরা উদ্বিগ্ন ও হতাশ। তাদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে। কারণ, ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভার কেউ ওই পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করে তাদের এ স্থল অভিযানের বিষয়ে বোঝাননি। অথচ, এ স্থল অভিযান গাজায় থাকা ২২৯ ইসরায়েলি জিম্মির নিরাপত্তা বিপন্ন করে দিতে পারে। এ বিষয়গুলো হামাসের হাতে বন্দী থাকা ইসরায়েলিদের আত্মীয়-স্বজনদের বোঝাতে হবে।’

ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘স্থল অভিযান গাজায় অপহৃত ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা বিপন্ন করবে কিনা, তা বোঝাতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d