গৃহবধূকে ফের অপহরণ করলো ছেলের ‘চাকরিদাতারা’
চট্টগ্রামে শেফালী ঘোষ নামে এক গৃহবধূকে দ্বিতীয়বারের মতো অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ আদালতে গৃহবধূর ছেলে প্রসেনজিত নিজে বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
মামলায় দুই যুবককে আসামি করা হয়েছে, যারা ওই গৃহবধূ ও তাঁর ছেলের পূর্বপরিচিত ছিলেন। তাঁর ছেলে প্রসেনজিতকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে কয়েক দফায় কয়েক লাখ টাকা নেন ওই গৃহবধূর কাছ থেকে।
তারা হলেন, ঢাকা জেলার উত্তরা থানার আবদুল্লাহপুর এলাকার ৯ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর বাড়ির মো. সাগর (২৫) এবং একই এলাকার মো. সলিমুল্লাহ (৩৭)।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রসেনজিত এবং তাঁর বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। লেখাপড়া শেষ করে প্রসেনজিত ২০২৩ সালের মে মাসের দিকে যখন চাকরির খোঁজ করছিলেন — তখনই সাগরের সাথে তাঁর পরিচয়। সাগর তাঁকে সরকারি চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে প্রসেনজিত তাঁর মা অর্থাৎ অপহৃত গৃহবধূর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিলে তিনি এত টাকা দিতে অপরাগতা জানান। তবে চাকরি জোগাড় করে দিতে পারলে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
একপর্যায়ে চাকরির জন্য সাগরকে ৩ লাখ টাকা, সাড়ে ৪ ভরি স্বর্ণ এবং দামি কাপড়-চোপড় দেন ওই গৃহবধূ। এর কয়েকমাস পর বিকাশে আরও এক লাখ ৯০ হাজার টাকা পাঠান। একদিন হঠাৎ ফোন করে গৃহবধূর কাছে আরো আড়াই লাখ টাকা দাবি করেন সাগর। তখন ভিকটিম তার ছেলেকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে টাকা দেওয়ার কথা বলেন।
গত বছরের ৭ আগস্ট সকালে ভিকটিমের ছেলে এবং স্বামী ব্যবসার কাজে বের হলে এসে দেখেন ভিকটিম নিখোঁজ। পরে ভিকটিমের স্বামী ঝন্টি ঘোষ থানায় জিডি করেন। সে সময় আসামিরা দুইটি নম্বর থেকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে ক্ষতি করার হুমকি দিলে এ বিষয়ে র্যাবে অভিযোগ করেন ভিকটিমের পরিবার। র্যাব-পুলিশ উদ্ধারে তৎপরতা চালালে আসামিরা ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়।
এরপর চলতি বছরের ৩০ মার্চ সকাল ১০টায় আসামিরা ভিকটিমকে বাসার সামনে থেকে আবারও অপহরণ করে। ওইদিন রাতেই খোঁজাখুঁজি করে ভিকটিমকে না পেয়ে তার পরিবার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওইদিন রাত ৯টার দিকে দুই নম্বর আসামি অর্থাৎ মো. সলিমুল্লাহ বাদী প্রসেনজিতের চাচা রাজন ঘোষের নম্বরে ফোন করে ভিকটিমের সাথে কথা বলিয়ে দেন। ভিকটিম বাদীর চাচাকে জানায়, ‘আমাকে ওরা আবারো ধরে নিয়ে আসছে টাকার জন্য। টাকা না দিলে আমার কিডনী বিক্রি করে দিবে বলে ওরা জানিয়েছে।’ এ কথা বলেই ফোন কেটে দেয় আসামিরা।
পরদিন বিকেল ৪টায় আবারও আরেকটি নম্বর থেকে বাদীর ছোট ভাই প্রান্ত ঘোষের নম্বরে ফোন করে ভিকটিমকে ফেরত দেওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসামি সলিমুল্লাহ। নাহলে কিডনি বিক্রি করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কল বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ভিকটিমকে আসামিরা অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে এ মুক্তিপণ দাবি করছে বলে উল্লেখ করা হয় মামলার বর্ণনায়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ।
তিনি বলেন, ‘অপহরণের পর মুক্তিপণের দাবিতে এক নারীর কিডনি বিক্রি করে দেয়ার হুমকির অভিযোগে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। অপহৃত নারী শেফালী ঘোষের পুত্র প্রসেনজিৎ ঘোষ বাদী হয়ে আজ মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের করেন।’
মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ও সংশোধিত ২০০৩ এর ৭/৩০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও জানান এই আইনজীবী।