ঘরের মোশতাকদের চিহ্নিত করার সময় পার হয়ে যাচ্ছে
বর্তমান সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে কিছুটা অনিশ্চয়তায় কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন হবে কি হবে না, বিদেশে ষড়যন্ত্র, সুশীলদের ষড়যন্ত্র এমনকি আওয়ামী লীগের আমলে যেসব ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিয়ে ফেঁপে ফুলে উঠেছিল তারাও আজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করছে। প্রায় সপ্তাখানেক আগে সংসদীয় কমিটির সভায় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একটি কথা বলেছিলেন যেটি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তবভিত্তিক। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে মোশতাক। তার কথায় একটি জিনিস খুব পরিষ্কার বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সঠিক সময় হবে কিনা, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে কিনা এবং আওয়ামী লীগই টিকে থাকবে কিনা সেটি নির্ভর করে মূলত আওয়ামী লীগের উপর। কারণ আওয়ামী লীগ যদি এই ঘরে ঘরে মোশতাকদের এখনই না সরাতে পারে তাহলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব সংকটে পরতে পারে।
আমি মনে করি আওয়ামী লীগের যত সমস্যা, যত সংকট সবকিছু কেবল একটি কাজের মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। নির্বাচন সঠিক সময় হবে, আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করবে, দেশের উন্নয়নের ধারাও অব্যহত থাকবে এবং ২০৪৩ সালের ডেন্টা প্ল্যান সেটিও যথা সময় বাস্তবায়ন হবে। এর জন্য যদি আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে লুকিয়ে থাকা এসব মোশতাকদের নির্মূল করতে হবে। সুশীলদের বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র, বিদেশিদের সরকারকে চাপে ফেলে বিরোধীদলকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র, বিরোধীদলের আন্দোলন এসবই সাইড ফ্যাক্টর। এগুলো মূল সমস্যা না। আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে যে মোশতাকরা ঘাঁটি গড়েছে তাদের মোকাবেলা করাই এখন আওয়ামী লীগের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।
আওয়ামী লীগ এবার তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে এবং দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বহু মাইলফলক অর্জন করেছে। দেশের বৃহত্তম স্থাপনা পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সেপ্রেসওয়ের ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সাফল্যে যুক্ত হয়েছে আরেকটি সোনালি পালক। সেদিন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এসব অর্জন মলিন হয়ে যায়, এসব অর্জন সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ হয় সে সকল মোশতাকদের কারণেই। এরাই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শত্রু।
এক-এগারোর সেই দুর্গম পরিস্থিতিতে যারা আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছিলেন, সেই রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা এখন অনেকটাই অবহেলিত। তাদের বদলে আওয়ামী লীগে জায়গা করে নিয়েছে মুখোশধারী নব্য আওয়ামী লীগাররা। তারাই এখন আওয়ামী লীগের হর্তাকর্তা, নীতি নির্ধারক। দুঃসময়ে এরাই সবার আগে মুখোশ পাল্টাবে। দলকে বিপদে ফেলবে। এসব ঘরের মোশতাক যারা আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে ফুলেফেঁপে উঠেছে, তাদের এখনই চিহ্নিত করতে হবে। সময় খুব বেশি নেই। এখনই এদের প্রতিহত করতে না পারলে হয়ত অনেক দেরি হয়ে যাবে।