চকরিয়ায় চিংড়ি জোনে সরকারি ২৭ স্লুইসগেট জবরদখল
কক্সবাজারের চকরিয়ার চিংড়ি জোনে অবস্থিত মৎস্য অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে থাকা সরকারি ২৭টি স্লুইসগেট জবরদখলের ঘটনা ঘটেছে। গত চারদিন আগে উপকূলীয় অঞ্চলের একটি জলদস্যু চক্র প্রকাশ্যে চিংড়িজোন এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দায়িত্বরত লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে স্লুইসগেটগুলো দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
একসনা লিজ নিয়ে কেয়ারটেকার হিসেবে উপকারভোগী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জবরদখলে নেওয়া স্লুইসগেটগুলো (জলকপাট) মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে শুক্রবার নিলামের মাধ্যমে বহিরাগত লোকজনের মাঝে বরাদ্দ দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
নিলামের আগে ২৭টি স্লুইসগেটের মধ্যে দুই ইউপি চেয়ারম্যানের একজন ২১টি ও অপরজন ৬টি মিলেমিশে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ। নিলামে একটি স্লুইসগেট দুই লাখ টাকা থেকে তিন লাখ টাকায় হাতবদল হয়েছে বলে দাবি করেন চিংড়ি ঘেরের চাষিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি জোনে কক্সবাজার মৎস্য অধিদপ্তরের মালিকানাধীন ২৪টি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩টি স্লুইসগেট (জলকপাট) রয়েছে। এসব স্লুইসগেট দিয়ে যুগের পর যুগ ধরে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে মৎস্য চাষ করে আসছেন চাষিরা।
জানা গেছে, স্লুইসগেট লাগোয়া ২০-২২টি মৎস্য ঘেরের মালিকরা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নীতিমালার আলোকে পাউবো ও মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপত্র (একসনা লিজ) নিয়ে প্রতিবছর স্লুইসগেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে বৈধভাবে পরিচালনা করে আসছেন। তাতে এতদিন ঘের মালিক ও স্লুইসগেট কতৃপক্ষের সঙ্গে কোনধরনের জোটঝামেলা হয়নি। সেই স্লুইসগেট অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে পাহারারত কর্মচারীদের তাড়িয়ে দখল করেছে।
স্লুইসগেটগুলোর লাগোয়া ইউনিয়ন সাহারবিল। ঘটনার ব্যাপারে সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান নবী হোছাইন জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এই বিষয়ের সাথে কোনভাবে জড়িত নই। কেউ আমার কথা বললো তা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। স্লুইসগেট নিলাম নিয়ে আমি কিছুই জানি না।এদিকে চিংড়িঘের মালিক ও চাষিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর চকরিয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চিংড়িজোনের স্লুইসগেটগুলো জবরদখল নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। সভায় চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী চিংড়িজোনের এসব স্লুইসগেট আগের মতো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঘের মালিক ও চাষিদের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছেন।
চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারহান তানজিম বলেন, চিংড়িজোনের এসব স্লুইসগেট স্থানীয় ঘের মালিকরা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নীতিমালার আলোকে প্রতিবছর মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে কে বা কারা এসব স্লুইসগেট দখলে নিয়েছে এ বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি।
তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত ঘটনায় ভুক্তভোগী ঘের মালিকরা লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই মৎস্য অধিদপ্তর সরকারি সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, উপজেলার চিংড়ি জোনের স্লুইসগেটগুলো সরকারি সম্পত্তি। যদি কেউ এসব স্লুইসগেট অবৈধভাবে দখল করে থাকে তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, স্লুইসগেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণে কারা কীভাবে কাজ করছেন সেটি জানতে মৎস্য অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে। এরপর করণীয় নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।