চট্টগ্রামে অগ্নিঝুঁকিতে অর্ধশত মার্কেট ভবন
চট্টগ্রাম নগরীতে অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে অর্ধশত মার্কেট। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব মার্কেটে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব মার্কেটে হাঁটাচলার পথ যেমন সরু, তেমনি এর ফুটপাত দখল করেও গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঘনবসতিপূর্ণ ও গিঞ্জি মার্কেটগুলোয় হঠাৎ আগুন লাগার মতো কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ঢুকতে পারবে না ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। অগ্নিনির্বাপণের জন্যও আশপাশে কোনো জলাধার নেই। অথচ এ বিষয়ে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) হিসাব অনুযায়ী, নগরীতে ৭ হাজারের মতো বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের অর্ধেকেরও বেশি আবাসিকসহ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। বিল্ডিং কোড অনুসারে নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণ হয়েছে কি না তা দেখার দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সংস্থার কোনো নজরদারি না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের জরিপ অনুযায়ী নগরীতে বহুতল ভবন এক হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে নগরীর সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত রিয়াজউদ্দিন বাজার। কোতোয়ালি থানাধীন এ মার্কেটটি গড়ে উঠেছে কয়েক বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে। যেখানে ছোট-বড় শতাধিক মার্কেটে রয়েছে ১০ হাজারের বেশি দোকান। এসব মার্কেট একটি আরেকটির সঙ্গে লাগোয়া। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এ বাজারে রয়েছে বেশকিছু খাবারের দোকান। সিলিন্ডার গ্যাসেই এসব দোকানে রান্না হয়। দোকানের কর্মচারীরা থাকেন মার্কেটগুলোর বহুতল ভবনের ওপরের তলায়। যেখানে সিগারেট ও মশার কয়েল থেকে প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ড ঘটার শঙ্কা রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (চট্টগ্রাম) এমডি আবদুল মালেক যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের বড় বিপণিবিতানগুলোর মধ্যে টেরিবাজার, জহুর হকার্স মার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের যাতায়াতের রাস্তা অনেক সরু। এসব মার্কেটে নেই পর্যাপ্ত সিঁড়ি, পানির উৎস এবং আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি। অথচ রয়েছে হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কোনো কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বেইলি রোডের ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জরিপে নগরীতে ১৮ হাজার ৫০০টি বহুতল ভবন রয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৭৫০টি ভবনই অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া ১ হাজার ৩৫০টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
বাস্তবায়ন হয়নি জেলা প্রশাসনের ১১ সিদ্ধান্ত : গত বছরের ১০ এপ্রিল এক সভায় নগরীর মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১১টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে প্রায় এক বছরেও এসব সিদ্ধান্তের কোনোটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল মালেক বলেন, অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া ১১ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন মনিটরিং করছে। যারা সিদ্ধান্ত মানেনি, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।