চট্টগ্রামে মৎস্যে ক্ষতি ২৭৭ কোটি টাকা
বন্যার পানিতে চট্টগ্রামে ২৭৭ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরসরাই মুহূরী মৎস্য প্রজেক্টের চাষীরা। এ প্রজেক্টের ৬ হাজার একরে চাষকৃত মাছ বন্যার পানির সাথে একাকার হয়ে গেছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক মৎস্য ক্ষেত্র হালদা নদীর বড় আকারের রুই জাতীয় মাছ বিভিন্ন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত কয়েকদিনে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য চাষের পুকুর, দিঘি ও মৎস্য হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরসরাই উপজেলায়। এ উপজেলার ৬ হাজার একর আয়তনের মুহূরী মৎস্য প্রজেক্টের সবগুলো মাছ পানিতে ভেসে গেছে। স্থানীয় চাষীরা জানান, তাদের প্রতি একরে গড়ে ১০ লাখ টাকার মাছ থাকে। সে হিসেবে তাদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার মাছ। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষতি নিরুপণে মৎস্য বিভাগ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলা মৎস্য অফিসের হিসাবে মিরসরাই উপজেলায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৪২ কোটি টাকা। এ উপজেলার ৮ নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের আবদুল টেন্ডাল বাড়ির জনৈক বাবরের জালে বৃষ্টির পানিতে ধরা পড়েছে ২০ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ। জেলা মৎস্য অফিসের ধারণা বানের পানিতে ভেসে মাছটি হালদা নদীর সংযুক্ত খাল-বিল হয়ে ওই এলাকায় গেছে।
এদিকে বৃষ্টি ও বানের পানিতে মিরসরাইয়ের পর বেশি ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলার বেশিভাগ ইউনিয়নের পুকুর, দিঘি ও মৎস্য প্রজেক্ট বানের পানিতে ভেসে গেছে। তাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা। বানের পানিতে একই অবস্থা হয়েছে হাটহাজারী উপজেলাও। এ উপজেলায় বানের পানিতে ভেসে গেছে ১২ কোটি টাকার মাছ। বানের পানি থেকে রেহায় পায়নি রাউজানের পুকুর, দিঘি ও মৎস্য হ্যাচারিগুলো। এ উপজেলায় মৎস্য বিভাগের তাৎক্ষণিক হিসেবে ক্ষতি নিরুপণ করা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। তাছাড়া বৃষ্টি ও বানের পানিতে ক্ষতি হয়েছে সীতাকুণ্ড ও রাঙ্গুনিয়ার পুকুর, দিঘি ও মৎস্য হ্যাচারিগুলোও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ দৈনিক বলেন, ‘গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে ভেসে গেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য চাষের পুকুর, দিঘি, মৎস্য হ্যাচারির মাছ। এতে মৎস্য বিভাগের তাৎক্ষণিক হিসেবে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৭৭ কোটি টাকা। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে হালদা নদী বেশি প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় নদীর অন্যান্য মাছ ছাড়াও রুই জাতীয় মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) খাল-বিলে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কি এসব মাছ খাল-বিল হয়ে বিভিন্ন উপজেলাও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে মনে হচ্ছে মিরসরাই উপজেলায় মানুষের জালে ধরা পড়া ২০ কেজি ওজনের কাতলা মাছটি হালদা নদীর। এ কারণে হালদার রুই জাতীয় মাছের বিশুদ্ধতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’