চট্টগ্রামে যে কারণে শীতের তীব্রতা
১৩ জানুয়ারি, পৌষের শেষবেলায় কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে নগরের পথঘাট। ঘড়ির কাঁটায় যখন বেলা ১১টা, কুয়াশা ভেদ করে তখন সূর্য দেখা দিলেও সারদিন ধরে চলছে রোদের লুকোচুরি। তার সঙ্গে চারদিকে বইছে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া। আর তাতেই অনুভূত হচ্ছে শীতের তীব্রতা। মনে হবে যেন জেঁকে বসেছে শীত। কিন্তু তীব্র শীত পড়ার মতো তাপমাত্রা খুব একটা না কমেনি চট্টগ্রামে।
আবহাওয়া অফিস বলছে— চট্টগ্রামে তাপমাত্রা কম না থাকলেও বাতাসের তীব্রতা থাকায় শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। চলতি মাসেও তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রিতে উঠানামা করতে পারে। তবে দেশেও কোথাও কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও চট্টগ্রামে তার আভাস নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে, চট্টগ্রামে জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সপ্তাহজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কখনো কখনো আবার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়ে। যদিও বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে।
গতকাল শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। এছাড়াও চট্টগ্রামে এ মুহূর্তে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহেও তাপমাত্রা ছিল ২০ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোনো কোনো দিন আবার স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি তাপমাত্রা ছিল। বায়ুর আদ্রতা কম থাকায় সেসময় শীতের তীব্রতা তেমন ছিল না। এর পর থেকেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা নেমে আসে ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। একইসঙ্গে দিনের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ যে তাপমাত্রা থাকার কথা তা থাকছে গড়ে ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি কম।
অন্যদিকে, আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে— অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিত চৌধুরী বলেন, ‘তীব্র শীত পড়ার মতো তাপমাত্রা চট্টগ্রামে কমেনি। এখনো ১৪ ডিগ্রির উপরে আছে। হিমালয়ের পূর্বদিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শীত বেশি মনে হয়। তার প্রধান কারণ হলো বাতাস ও বায়ুর আদ্রতার পরিমান বেশি থাকা। আদতে চট্টগ্রামে শীত তেমন নেই। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও তাপমাত্রা তেমন কমার সম্ভাবনা নেই। বড়জোর এক-দুই ডিগ্রিতে উঠানামা করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে এখন মাঝারি মানের কুয়াশা পড়ছে। আগামী কয়েকদিন এমন অবস্থা বিরাজ করবে। তাছাড়া কুয়াশার তারতম্যের কারণে বাতাসও বাড়ছে। এইজন্যই শীতটা অনুভূত হচ্ছে।’ চট্টগ্রামে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপাতত চট্টগ্রামে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই। কারণ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রির নিচে নামে না। আবার নামলেও তা পর পর তিন দিন স্থায়ী থাকতে হবে। টানা তিনদিন একই রকম পরিস্থিতি হলে তখন চট্টগ্রামে শৈত্যপ্রবাহ বলা যাবে। আর চট্টগ্রামে সে সম্ভাবনা কম। যদিও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তার প্রভাবে সেখানে তাপমাত্রা কমে শীত পড়তে পারে।’