চট্টগ্রাম : পুরোনো দ্বন্দ্ব ভোটের মাঠে নতুন রূপে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের পুরোনো বিরোধ নতুন রূপে দেখা দিয়েছে। দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। নগর ও জেলায় ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভোটের মাঠে সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে নগর ও নগর সম্পৃক্ত আসন রয়েছে ছয়টি। এরমধ্যে তিনটি আসনে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা পুরোদমে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। কোন আসনে নৌকা, আবার কোন আসনে নৌকাবিরোধী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনে চতুর্থবারের মতো নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এমএ লতিফ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। সুমনের পক্ষে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন। শুধু নাছির নন, নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই সুমনের পক্ষে রয়েছেন। এতে ক্ষুদ্ধ হন এম এ লতিফ। নগর আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের বিরোধিতায় ক্ষুব্ধ এম এ লতিফ এক সভায় বলেছিলেন, ‘যারা নৌকার গায়ে কুড়াল মারার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা কুড়াল মার্কার ফ্রিডম পার্টির লোক।’ আরেক সভায় নগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি। এজন্য লতিফকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) চিঠি দেয় নগর আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের কোন্দল এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম-৮ ও ১০ আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। পছন্দনীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাচ্ছেন তারা।
চট্টগ্রাম-৮ ( বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ আংশিক) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নেই। আসনটি জাপাকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে শক্ত অবস্থানে আছেন নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম ও সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরী। দুই নেতাকে ঘিরে দুই ধারায় বিভক্ত আওয়ামী লীগ। তবে কয়েক দিন ধরে বিজয় কুমারের পক্ষে মাঠে নেমেছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন ও বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ। নাছির-নোমান মাঠে নামায় বোয়ালখালী ও নগর আওয়ামী লীগের বড় অংশ এখন বিজয় কুমারের পক্ষে ভোটে নেমেছেন। ছালামের পক্ষেও একটি অংশ রয়েছে।
নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নাছির ও ছালাম- এই দুই জন দুই মেরুর। ছালাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। মাঠে আছেন সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ। নগর আওয়ামী লীগ বাচ্চুর পক্ষে রয়েছেন। এ আসনে আছেন সাবেক মেয়র মনজুর আলম। মনজুর আলম ও ফরিদ মাহমুদের পক্ষে আওয়ামী লীগের একটি অংশ মাঠে রয়েছে।
নগর আওয়ামী লীগ ছাড়াও জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ছাইচাপা কোন্দল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দাউ দাউ করে জ¦লে উঠেছে। জেলার পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সন্দ্বীপ আসনে ইতিমধ্যেই প্রার্থীদের নিয়ে একাধিক সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের কোন্দল দীর্ঘদিনের। সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ মোতালেবকে ঘিরে বিরোধ ছিল প্রকাশ্যে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চরম রূপ নিয়েছে। দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা লেগেই রয়েছে।
একই অবস্থা পটিয়া আসনে। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন-কমিটি নিয়ে সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এবার দলীয় প্রতীক নৌকা পাননি সামশুল হক। নৌকা পান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। এখন ভোটের মাঠে দুই প্রার্থীকে ঘিরে আওয়ামী লীগের পুরোনো কোন্দল নতুন করে জ¦লে উঠেছে। সংঘাত-সংঘর্ষ লেগে রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) ও চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনেও আওয়ামী লীগের পুরোনো কোন্দল এখন ভোটের মাঠে জ¦লে উঠেছে। বাঁশখালীতে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনকে ঘিরে কোন্দল দীর্ঘদিনের। তারা এখন ভোটের মাঠে রয়েছে। মোস্তাফিজ ও মুজিবকে ঘিরে ভোটের মাঠে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।