চট্টগ্রাম রেলস্টেশন মাস্টারের পদ পেতে বিতর্কিত শফিকের দৌড়ঝাঁপ
চলতি বছরের ১২ মার্চ চাকরি থেকে অবসরে যান চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জাফর আলম। এরপর থেকে এখনো স্টেশন মাস্টারের পদটি শূন্য রয়েছে।
কিন্তু এ পদের দায়িত্ব পালন করছেন নানা ইস্যুতে সমালোচিত গ্রেড-৩ পর্যায়ের আরেক স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলাম। গ্রেড-১ পদমর্যাদার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হতে নানা তদবির চালাচ্ছেন শফিক। এনিয়ে নিয়মিত ঢাকা আসা-যাওয়া শফিকের।
এর আগে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হিসেবে মো. শফিকুল ইসলামকে পদায়ন করলেও নানা সমালোচনার মুখে তাকে আবারও চট্টগ্রাম ফিরে আনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাই গ্রেড-৩ পর্যায়ের বিতর্কিত এক কর্মকর্তাকে চট্টগ্রামের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে পদায়ন করলে রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, গ্রেড-১ পদমর্যাদার কুমিল্লার স্টেশন মাস্টার মাহবুবুর রহমান ও লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন রয়েছেন। নিয়ম ও অভিজ্ঞতা অনুয়ায়ী তারা চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হিসেবে পদায়নের যোগ্য। কিন্তু সমস্ত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নানা ইস্যুতে সমালোচিত সেই শফিককে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হিসেবে পদায়ন করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে একটি পক্ষ।
গত বছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন। এজন্য কক্সবাজার রেলস্টেশনে মাস্টার হিসেবে মো. শফিকুল ইসলামকে পদায়ন করা হয়েছিল।
এরপর ৪ নভেম্বর সকালে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে মাস্টার পদে যোগ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিও দেন তিনি। তবে সেদিন বিকেলেই আবারও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে তাকে ফেরত নিয়ে আসা হয়।
বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাসহ টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে তাকে ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা যায়।
রেল সূত্র আরও জানায়, নানান অনিয়মে জড়িত মো. শফিকুল ইসলামকে কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে মাস্টার হিসেবে পদায়নের পর রেলওয়ে শ্রমিক লীগ সহ নানা মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ নিয়ে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ মহাপরিচালক ও পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন সংগঠনের নেতারা। ফলে শফিকুল ইসলামকে তড়িঘড়ি করে কন্ট্রোল অর্ডারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে ফেরত আনা হয়।
এদিকে ১৯ বছর ধরে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পড়ে আছেন স্টেশন মাস্টার (গ্রেড-৩) মো. শফিকুল ইসলাম। এর মধ্যে তার বদলির সুপারিশ হলেও ক্ষমতার দাপটে রয়ে গেছেন এক জায়গায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যখনই কোনো অপশক্তি রেলে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছে তখনই রেলওয়ে শ্রমিক লীগ তার দাঁত ভাঙা জবাব দিয়েছে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের পদটি শূন্য রয়েছে। আমরা চায় সেখানে বঙ্গবন্ধুর আর্দশে বিশ্বাসী একজন নিয়োগ আসুক। সেখানে কোনো বিতর্কিত, টিকিট কালোবাজারিকে যাতে পদায়ন করা না হয়।
২০০৪ সালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে সহকারী স্টেশন মাস্টার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন মো. শফিকুল ইসলাম। এরপর টানা চাকরি করে যাচ্ছেন চট্টগ্রামে। এরমধ্যে ২০১০ সালে মীরসরাইয়ে একবার বদলি হলেও সেই স্টেশন বন্ধ থাকায় গ্রেড বাড়িয়ে তাকে আবারও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে রাখা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। তার সুনজরে রেলে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। আমরা চাইবো এ উন্নয়ন যাতে কোনো জামাত-শিবির অপশক্তি ম্লান করতে না পারে। চট্টগ্রাম স্টেশন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। এ স্টেশনে প্রগতিশীল, বঙ্গবন্ধুর আর্দশে বিশ্বাসী কর্মকর্তাকে যেন স্টেশন মাস্টার হিসেবে নিয়োগ দেয়। কোনো অযোগ্য, নানা বিষয়ে সমালোচিত ব্যক্তিকে যেন চট্টগ্রাম স্টেশন মাস্টার হিসেবে নিয়োগ না দেয়। এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে জানার জন্য শফিকুল ইসলামকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারবো না। কারণ স্টেশন মাস্টার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু পূর্বাঞ্চলের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।