চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ফল জালিয়াতি, অভিযোগ মাথায় নিয়ে নারায়নের বদলি

চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথকে বদলি করা হয়েছেে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক হিসেবে এ কর্মকর্তাকে বদলির পর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল মোস্তফাকে।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) মন্ত্রণালয়ের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ বদলির আদেশ হয়েছেে। ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল ছাড়তে নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। এর আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থেকে সচিবের দায়িত্ব পান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথ।

এদিকে বদলি হওয়া সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে চলছে ফল জালিয়াতি কাণ্ডের তদন্ত। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে অন্তত পাঁচ বিষয়ে ফল জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। অধিকতর তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটির চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্রসহ আগামীকাল ১০ জুলাই দুপুরে অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথকে সশরীরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার একদিন আগেই মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক হিসেবে বদলির আদেশ আসে বোর্ড সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথের।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিলে বোর্ড সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেসময় মন্ত্রণালয় থেকে ১৫ কার্যদিবসের সময় বেঁধে দিলেও নানা অজুহাতে দুই মাস পরে গত ৩ জুন তদন্ত কাজ শুরু করে কমিটির তিন সদস্য। কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে (তদন্ত স্থগিত করতে) ৪ জুন উচ্চ আদালতে রিট করেন নারায়ন চন্দ্র নাথ। রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ তদন্ত কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন।

পরবর্তী সময়ে ওই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে আপিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। বোর্ড সচিবের করা রিট স্থগিত হলে ফের তদন্ত কাজ শুরু হয়। যদিও এখনো পর্যন্ত সেই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখিনি। তবে ফল জালিয়াতিতে অভিযুক্ত হওয়ার পরেও দুই দফায় পদোন্নতি পেয়েছেন অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথ।

এর আগে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বোর্ড সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে। প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে পাশ করিয়েছেন, এমন সন্দেহে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জানিয়েছেন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। সে সময় রহস্য উন্মোচনে তদন্ত এবং প্রভাবমুক্ত পুনঃনিরীক্ষণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদেরা। কিন্তু সেটিও একসময় ধামাচাপা পড়ে যায়।

পুনঃনিরীক্ষণ থামাতে গত ৫ নভেম্বর নগরের পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন বোর্ড সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলীম ও অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রতারণা, কম্পিউটারে বেআইনি প্রবেশসহ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d