চন্দনাইশের ১৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই
চট্টগ্রামের চন্দনাইশের ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, ৩৫টি সহকারী শিক্ষকের পদও ফাঁকা।সবমিলিয়ে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা খাতের হযবরল অবস্থা।
দ্রুত এ সমস্যা নিরসন প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিক্ষক অভিভাবক সকলেই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, শিক্ষার্থী রয়েছে ২০ হাজার ১শত ৮০জন। এর মধ্যে ১৭টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। উপজেলায় সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে ৩৫টি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপজেলা শিক্ষা অফিসার ১জন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ৩জন, হিসাব সহকারী ১জন পদে কর্মকর্তা রয়েছে তাছাড়া বাকি চারটি পদ উচ্চমান সহকারী ১টি, অফিস সহকারী ২টি, এমএলএসএস ১টি পদে কর্মকর্তা শূন্য রয়েছে।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক শূণ্য বিদ্যালয়গুলোতে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র শিক্ষকরাই। একদিকে স্কুলে পরিচালনা, অন্যদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রম পালন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান সবমিলিয়ে একাকার অবস্থা তাদের। সবকিছু ঠিকঠাক পালন করতে গিয়ে ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে। খোদ শিক্ষক অভিভাবকরাই বলছেন, একজন মানুষ এতো কাজ সামলানো খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার।
অভিভাবকেরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ভিত শক্ত করার স্তরই হলো প্রাথমিক। সেখানে যদি কোন ত্রুটি থেকে যায় সেই শিক্ষার্থী মাধ্যমিক, ক্ষেত্রবিশেষে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ভোগে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত শিক্ষক সংকট সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
প্রধান শিক্ষক শূন্যতার কারণে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ, শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ, সভা-সেমিনারে অংশ নেয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। ফলে পাঠদানের জন্য বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক সংকট লেগেই আছে।
শিক্ষকরা বলছেন, সহকারী শিক্ষক না থাকলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককেও দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি অনেক ক্লাস নিতে হয় তাদের। আবার প্রধান শিক্ষক না থাকলে সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান শিক্ষিকের দাফতরিক যে কাজগুলো রয়েছে তাতে কাজগুলো এখন আমাদের অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি করছে৷ এতে দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে ক্লাস করাতে পারেন না ঠিকমতো। তারা বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান কার্যক্রম অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খুদে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শূন্যতার কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমও কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা যায়।
কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সহকারী শিক্ষকেরা প্রশাসনিক কাজ করতে গিয়ে ক্লাসে নিয়মিত অংশ নিতে পারেন না। এতে বাকি শিক্ষকদের ওপর চাপ পড়ছে এবং কোনোমতে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। তাছাড়া অনেক সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককেই তেমন মূল্যায়ন না করায় চরমভাবে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেউ কেউ। আবার দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব চেপেছে। অথচ দায়িত্ব পালনকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সরকারি তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না।
উপজেলার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে যে সব বিদ্যালয়ে সেগুলো হলো- মধ্যম হাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কানাইমাদারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠানদন্ডী উজির আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইগাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর জাফরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ জাফরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাছনদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যতরকূল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ধোপাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব কানাইমাদারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ দিয়াকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম ধোপাছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ জোয়ারা বি.এল বড়ুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ধোপাছড়ি মংলার মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বশরত নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শামুকছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম কেশুয়া দেলোয়ার হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
দোহাজারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য গোপাল কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। ৭ থেকে ৮ বছর ধরে সহকারী থেকে প্রধান শিক্ষক পদে কোনো পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। এমন সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় অনেক সময় অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদানে ও সার্বিক কার্যক্রম চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চন্দনাইশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে সেগুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদানের জন্য সহকারী শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে কার্যক্রম চলমান। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব শূন্য পদ পূরণ করা হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই এর সমাধান হবে।