চবিতে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ১৪৯ শিক্ষকের
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা ও বৈষম্য নিরসনে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ১৪৯ জন শিক্ষক।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) সচেতন সাধারন শিক্ষকের ব্যানারে দেওয়া এই বিবৃতিতে তারা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য ১৯৭৩ অধ্যাদেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতি যেমন একদিকে গৌরব আর মুক্তির প্রতীক, অন্যদিকে বিগত দশকগুলোতে দলীয় ছাত্র রাজনীতি হয়ে পড়েছে খুন, দখল, চাঁদাবাজি, নির্যাতন আর ভয়ের প্রতীক। দলীয় ছাত্ররাজনীতি চলমান থাকার কারনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা মেধার ভিত্তিতে, বৈধ ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে আবাসিক হলগুলোতে আসন বরাদ্দ পাচ্ছে না, যা তাদের অত্যাবশ্যকীয় অধিকার।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দলীয় ছাত্র রাজনীতির কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের পর দিন ব্যাহত হয়েছে একাডেমিক কার্যক্রম, যেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা হয়েছেন নৃশংসতা ও জিম্মিকরণের শিকার। আরেক দিকে শিক্ষক রাজনীতির নামে দলীয় ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমস্যার ট্যাগ লাগাতে হচ্ছে শিক্ষকদের এবং চলছে বিভিন্ন বৈষম্য। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের কারনে শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। যে বিষয়টি নিয়ে এখন নতুন করে ভাবতে হবে।
অতি নগণ্য সংখ্যক ছাত্ররাজনীতিকের কথা বাদ দিলে দেখা যাবে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতানেত্রীর লেজুড় হিসেবে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে, হলে-ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী-শিক্ষক নিপীড়নসহ ক্যাম্পাসে হেন অপকর্ম নেই যার সঙ্গে জড়িত থাকে না।
বিগত দশকগুলোর চিত্র স্পষ্ট করেছে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দাপটে বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক কোনো কর্মকাণ্ডই পরিচালনা করতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে ছাত্ররাজনীতি তথা শিক্ষার্থীদের বারবার ব্যবহার করেছে। কিন্তু কোনো একটি দলও ক্ষমতালাভের পর শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণে মনোযোগী হয়নি। দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকগণ, খুব স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, চবিতে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। ছাত্ররা তাদের অধিকারের কথা বলবে চাকসু সক্রিয়করণের এবং কার্যকরী সিনেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে। চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সেই সঙ্গে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে সিনেটে প্রতিনিধি প্রেরণ করার মাধ্যমে।
এ ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জোরালো দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ও প্রাসঙ্গিকভাবে লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক রাজনীতিকেও কিভাবে সংস্কার করা যায় তা নিয়ে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন এর মূল চেতনাকে সমুন্নত রাখা অত্যন্ত জরুরি, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা যায়।
বিবৃতি দেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে আছেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ১১ জন শিক্ষক, প্রাণরসায়ন ও অনুরান বিজ্ঞান বিভাগের ১০ জন, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ৬ জন।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খাদিজা মিতু, ড. আলাউদ্দিন, সাংবাদিকতা বিভাগের আর রাজী ও সায়মা আলম, ভুগোল বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল, প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল হক, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশাররফ হোসেন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. লুলু অয়াল মারজান, অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুল ইসলাম, ড. মাহবুব হাসান, প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল আহমেদ, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমিন সুলতানা, ড. নুরুদ্দিন মাহমুদ, হিউম্যান রিসর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. আফতাবউদ্দিন, একাউন্টিং বিভাগের ড. সুমন ভট্টাচার্য, মৌরি দে, ফাইনান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. অনুপম দাশ গুপ্ত, ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. দিদারুল আলম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সায়মা আলম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেকুল হাসান চৌধুরী, ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফজলুল কাদের, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসমা বিনতে শফিক, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. অনুপম কুমার দাশ, মার্কেটিং বিভাগের এইচ এম কামরুল হাসান, শিক্ষা ও গবেষনা ইন্সটিটিউটের তাসনিম মুশাররাত, মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।