চট্টগ্রামচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়রাজনীতি

চবি ছাত্রলীগে নেতৃত্বের দৌড়ে বিতর্কিতরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বিতর্কিতরা। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্রলীগ কর্মী হত্যা মামলার আসামি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত, চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত ও অছাত্ররা নেতৃত্বের দৌড়ে যুক্ত হয়েছেন।

ইতোমধ্যে কমিটিতে শীর্ষ দুটি পদ পেতে ডজনখানেক নেতা লবিং শুরু করেছেন। জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ২০২২ সালে ৪২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে চলতি বছরের গত ২৪ সেপ্টেম্বর দফায় দফায় মারামারি ও সাংবাদিক মারধরের জের ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ১৪ অক্টোবর পদপ্রত্যাশী সবার জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেতৃত্বে আসতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আগ্রহী ছাত্রলীগ নেতারা।

সভাপতি পদ প্রত্যাশী যারা: সভাপতি পদ প্রত্যাশীরা সবাই আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এর মধ্যে সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকলেও খুন, মারামারি, হল দখলের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তাপস হত্যা মামলার আসামিও তিনি। ভার্সিটি এক্সপ্রেস নামে বগিভিত্তিক একটি গ্রুপেরও নেতৃত্বে আছেন তিনি।

শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের নেতৃত্বের দৌড়ে রয়েছেন সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম সাঈদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। সে হিসেবে তার ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার কথা ২০১৭ সালে। তবুও তিনি ছাত্র! বর্তমানে সিক্সটি নাইনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১৬ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছিলেন।

এছাড়া আসন্ন কমিটিতে সভাপতি পদ প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ মোস্তফা আশফি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন না, নেই কোনো বিতর্কিত কর্মকা-। আশফি ১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের আপন ভাগিনা।

সভাপতি পদ পেতে মরিয়া সাবেক সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন টিপুও। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তার ছাত্রত্ব নেই। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারকে মারধরের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী যারা: সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের সবাই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এর মধ্যে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পদক মো. ইলিয়াস সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে মরিয়া। তিনি ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। কর্মীবান্ধব এই নেতার বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলে আলাওলও এফ রহমান হল দখলে রেখে নিয়ন্ত্রণ করেন ইলিয়াস।

নেতৃত্বের দৌড়ে আলোচনায় আছেন সাবেক সহ-সভাপতি সাদাফ খান। আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। আমানত হলের সিএফসি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। ২০১৭ ও ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দুই দফা তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল।

সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে দৌড়ঝাঁপ করছেন সাবেক সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম সবুজ। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। রেজিস্ট্রার দপ্তরের এস্টেট শাখা, প্রকৌশল দপ্তর ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে গিয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে, ছাত্রলীগের কোনো পদে না থেকেও সাধারণ সম্পাদকের এ দৌড়ে আছেন সাখাওয়াত হোসেন। বিজয়ের সোহরাওয়ার্দী হল নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সবচেয়ে জুনিয়র হিসেবে পদ পেতে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন সাখাওয়াত। হলের রুম দখল ও মারামারির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আমরা জীবন বৃত্তান্ত চেয়েছি। জমা দেওয়ার পর আমরা বিশ্লেষণ করবো। দলের বিভিন্ন দুঃসময়ে যারা সংগঠনের জন্য কাজ করেছে তাদেরই বেছে নেব।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে আমরা শিগগিরই নতুন কমিটি দিব। স্মার্ট, মেধাবী, দক্ষ নেতৃত্ব দেখে গঠনতন্ত্রের আলোকে এ কমিটি করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d