চসিকের ভাগাড়ে চামড়ার স্তূপ, ‘নয়ছয়’ হিসাব নেতাদের!
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভাগাড়ে স্তূপ পড়েছে কোরবানির পশুর চামড়ার। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ধারণা মতে, লাখেরও বেশি চামড়া তারা ভাগাড়ে এনে ফেলেছেন। আড়তদারদের দাবি— দাম না পেয়ে সংগ্রহকারীরা চামড়া রাস্তার ধারে ফেলে চলে গেছে। চট্টগ্রামের একমাত্র ট্যানারি রিফ লেদার নেতাদের ‘চেহারা’ দেখে দেখে চামড়া কিনে নেবেন। বাকিরা চামড়া নিয়ে বেকায়দায় পড়েন। তাই অল্প লাভে স্বল্প ব্যবসা করেছেন তারা।
যদিও চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া কেনা হয়েছে। দাগ-কাটাছেঁড়া চামড়া ট্যানারিগুলো নেয় না। তাই অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে।
জাহাঙ্গীর নামে আরেক আড়তদার বলেন, ‘কি পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়েছে, আপনারা তা জানেন না। মানুষ এসেছে, দাম না পেয়ে চামড়া ফেলে চলে গেছে। আমরা কি করবো? নিজেরা লস দিয়েতো চামড়া নিবো না। চট্টগ্রামে এখন কোনো ট্যানারি নাই বললেই চলে। রিফ লেদারটা যদি বন্ধ হয়ে যেতো ভালো হতো। কারণ, ওরা শুধু মুসলিম ভাইসহ আরও কয়েকজন সমিতির (আড়তদার) নেতাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে। আমরা বাকিরা ঢাকায় গিয়ে ঘুরতে থাকি। আগে যে চামড়া ৮শ’ থেকে ১২‘শ টাকায় নিতাম এখন তা আমরা গড়ে ৪০০ টাকায় নিচ্ছি। এখন বাজার খুবই খারাপ।’
আবুল হোসেন নামে এক কাঁচা চামড়ার আড়তদার বলেন, ‘এবার জ্বরের জন্য শরীর কাহিল হয়ে গেছে। কিন্তু বসে থাকলেতো এ সিজনটা চলে যাবে। তাই দশ-বারো হাজার টাকা নিয়ে চামড়া সংগ্রহ করতে নেমেছি। লাভ তো দূরের কথা। গায়ে গায়ে লাভ টিকাতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে নগরের আরেফিন নগরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ময়লার ভাগাড় ঘুরে দেখা গেছে, ডাম্পিং এরিয়ার পথে পথে পড়ে আছে চামড়া। সেখানে চসিকের ৫০ জনের মতো কর্মী কাজ করছেন। সেখান থেকেই চামড়া ও নাড়িভুড়ি নিয়ে সেগুলো লবণ ছাড়া কেটে-ছেঁটে সংগ্রহ করছে কেউ কেউ। স্থানীয়ভাবে এসব বিক্রি করবেন তারা।
ময়লার ভাগাড়ে কর্মরত শ্রমিক মেহেরাজ বলেন, ‘লাখের বেশি চামড়া আনা হয়েছে। বিশেষ করে কোরবানির দিন (সোমবার) রাতে এবং আজ (বুধবার) পুরোদিন ধরে চামড়া আনা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার চামড়া আনা হয়েছে। তবে পরিমাণ অনেক কম ছিলো।’
ডাম্পিং এরিয়ার ওজন স্কেলের কর্তব্যরত কর্মী জিয়াউল হক বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ২৮০ থেকে ২৯০ ট্রাক ময়লা আনা হয়। তবে কোরবানির দিন ৭৬৮ ট্রাক ও পরের দিন ৫২২ ট্রাক ময়লা আনা হয়েছে। এরমধ্যে চামড়াও অনেক এসেছে। বিশেষ করে দেওয়ান হাট, আতুরার ডিপো থেকে গত দু’দিন ময়লা এসেছে। আর আজকে আতুরার ডিপো ও হাটহাজারী (পাহাড়তলী-১ ওয়ার্ড) এলাকা থেকে অনেক চামড়া আনা হয়েছে। হাটহাজারীতে রাস্তায় রাস্তায় অনেক চামড়া ফেলে রাখা হয়েছে। গতকাল (বুধবার) ৫ টনের চারটা গাড়ি ইতোমধ্যে চামড়াসহ ময়লা এনেছে। আরও আসছে।’
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজেমি সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘এবার দেওয়ানহাট ও আতুরার ডিপো এলাকা থেকে বেশ কিছু চামড়া বর্জ্যের সাথে অপসারণ করা হয়েছে। আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত কাজ করছেন। তারা রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা চামড়া মালিক ছাড়া দেখায় তা তুলে নিয়ে গেছে। ওগুলো ফেলেও তো রাখা সম্ভব না।’
কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘কোরবানির দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত গরু, মহিষ ও ছাগল মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে গরু প্রায় পৌনে দুই লাখ। এছাড়া গাউছিয়া কমিটির কাছে আরও ষাট হাজারের মতো চামড়া আছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে চামড়াগুলো এখনো আসেনি। সেগুলো এলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চামড়া ব্যবসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা কথাবার্তা ছড়াচ্ছে। আমরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করছি।’
আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা চামড়া মোটামুটি অনেক সংগ্রহ করেছি। তবে যে পরিমাণ সংগ্রহ করার কথা, তা এখনও হয়নি। আশা করি, বিভিন্ন উপজেলা থেকে চামড়া আসা শুরু হলে সাড়ে তিন লাখ না হলেও পৌনে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে পারবো।’
চামড়া নষ্ট হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চামড়া যেগুলো নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশ হলো গরুর অ্যানথ্রাক্স রোগ হয়েছে। এ রোগটা হলে গরুর চামড়ায় হাম/বসন্তের মতো দাগ দাগ হয়ে যায়। এগুলো ট্যানারি নিতে চায় না। এছাড়া অনেকে কাটা চামড়া নিয়ে আসছে। সেগুলোও বিক্রি করা যায় না। এজন্য অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে।’