চাটুকারিতা ইসলামের শিক্ষা নয়
সুবিধাবাদী, মতলববাজরা সব সময় প্রভাবশালীদের ঘিরে রাখে। রাজনীতির মাঠ, অফিস-আদালত, গ্রাম্য পঞ্চায়েত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সেক্টরেই প্রভাবশালীর আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যায় এ ধরনের লোকদের।
এসব মানুষ খুবই চালাক প্রকৃতির ও বাকপটু হয়। প্রভাবশালীদের তেল মর্দন, ভুলভাল বোঝানো, সুযোগ পেলে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সেলফি তুলে সেটাকে পুঁজি করে বিভিন্ন অপরাধ করাই তাদের কাজ।
এরা সারাক্ষণ প্রভাবশালীদের কাছে গিয়ে তাদের প্রশংসা করে বিভিন্ন স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় থাকে। আর অন্যের নামে গীবত গেয়ে নিজের অবস্থান পোক্ত করে। অনেক সময় এদের অপকর্মের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাদের প্রশংসায় প্রতারিত প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরই। এ কারণে মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের এ ধরনের লোক থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘জাগতিক জীবনে একদল মানুষের কথা আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং অন্তরের কথার ব্যাপারে তারা আল্লাহকে সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করে। প্রকৃতপক্ষে সে হচ্ছে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত: ২০৪)
রাসুল (সা.) বলেছেন, উম্মতের ব্যাপারে আমার যে বিষয়গুলোতে ভয় হয়, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাকপটু মুনাফিক। (মুসনাদে আহমদ: ১/২২)
এ কারণে সাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের কোনো চাটুকারকে মিষ্টি কথায় প্রতারণা করার সুযোগই দিতেন না। বরং কেউ চাটুকারিতা করার চেষ্টা করলে তাত্ক্ষণিক তার বিরুদ্ধে রাসুলের (সা.) শেখানো পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নিতেন।
আবু মামার (রহ.) থেকে বর্ণিত, কোনো একদিন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কোনো এক প্রশাসকের সামনেই তার প্রশংসা করতে শুরু করে। এতে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) তার মুখমণ্ডলে ধুলাবালি নিক্ষেপ করতে থাকেন এবং বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন চাটুকারের মুখে ধুলাবালি নিক্ষেপ করি। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৩)
সাহাবায়ে কেরামের মতো বিনম্র মানুষরা মিথ্যা প্রশংসাকারীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করার কারণ হলো, মহান আল্লাহ ও তার রাসুল সাহাবায়ে কেরামকে সর্বদা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকতে বলেছেন। আর মিথ্যুক, ষড়যন্ত্রকারী থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থেকো। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)
উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ মিথ্যুকদের বর্জন করতে বলেছেন এই জন্য যে মিথ্যাবাদীদের চাটুকারিতা মানুষের মধ্যে আত্মম্ভরিতা সৃষ্টি করে। আত্মম্ভরিতার কারণে নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে মানুষ ভুল ধারণার শিকার হয়। এই অপগুণ অন্যকে অবজ্ঞা করতে শেখায়। মানুষ তার স্বাভাবিক বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে। আত্মপ্রবঞ্চনার শিকার হয়।
যে মানুষের মধ্যে আত্মম্ভরিতা থাকে সে নিজের ভুলত্রুটি সম্পর্কে সচেতন হতে পারে না। এই অপগুণ সত্যানুসন্ধান থেকে মানুষকে বিরত রাখে। আত্মম্ভরিতা যাদের মধ্যে বাসা বাধে তারা কোনো সমালোচনাকে সহজে গ্রহণ করে না। চাটুকারদের মিথ্যা কথনে তারা প্রলুব্ধ হয়। চাটুকারদের কথায় প্রভাবিত হয়ে তারা নিরপরাধ মানুষদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। অনেক সময় নিরপরাধ মানুষদের ক্ষতিও করে বসে। চাটুকারদের কারণে পরিবারে, অফিসে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও দেশে নানা অরাজকতার সৃষ্টি হয়।
এ জন্য রাসুল (সা.) চাটুকারদের অভিশাপ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অতিরিক্ত চাটুকারীরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। তিনি এ কথাটি তিনবার বলেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৬৭৭)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায় যে চাটুকারিতা ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা ঘৃণিত কাজ। এটা মুনাফিকের অভ্যাস। তাই আমাদের সবার উচিত, এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
লেখক: সাআদ তাশফিন