চামড়া নিয়ে আড়তে আড়তে ঘুরপাক
থরে থরে সাজানো চামড়া। রিকশা, ভ্যান পিকআপে করে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা আসছেন সংগ্রহ করা চামড়া নিয়ে। দরদামে না হওয়ায় আড়তে আড়তে ঘুরছেন তারা। কেউ দাম না পেয়ে হতাশ, শঙ্কিত। কেউবা যা পাচ্ছেন তাতেই বিক্রি করে যেন ‘হাফ’ ছেড়ে বেঁচেছেন। মঙ্গলবার (১৮ জুন) নগরের আতুরার ডিপো এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
চামড়া নিয়ে বসে থাকা আবু তাহের নামে এক মৌসুমী ব্যবসায়ী বলেন, ‘চামড়ার দাম ঠিক করে দিয়ে সরকারের দায়িত্ব শেষ করে ফেলেছে। মাঠে এতোগুলো গোয়েন্দা আছে। কে কতটুকু দাম পাচ্ছে তা তো খবর নিতেই পারে। আগে আমরা যে চামড়া ৭শ থেকে ৮শ টাকা পেয়েছি, এখন সেটা ৩০০ টাকাও ঠিক মতো পাচ্ছি না। কালকে (সোমবার) রাতে কি পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়েছে জানেন। জুট (পাট) ব্যবসার মতো চামড়া ব্যবসাও একদিন হারিয়ে যাবে। সরকার আন্তরিক না হলে চামড়া ব্যবসা টিকবে না।’
প্লাস্টিকের বস্তায় দুটি চামড়া নিয়ে এসেছিলেন আব্দুর রহমান নামে এক বৃদ্ধ। চামড়া না দেখেই মাঝারি দুটি গরুর চামড়ার দাম হাঁকান ৫০০ টাকা। দরদামে বনিবনা না হওয়ায় আড়ত ছাড়তে চাইলে শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৬শ টাকায় চামড়া দুটি কিনে নেন আড়তদার।
এ প্রসঙ্গে আড়তদার জাহাঙ্গীর সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘কিছু করার নাই। আমরাও ঠেকতে ঠেকতে শিখে গেছি। আজকে ৪০ বছর ধরে এ ব্যবসা করি। আগে চামড়া যারা আনতো তারাও দাম পেতো। আমরাও দাম পেতাম। গত ১২-১৫ বছর ধরে আমরা দাম পাচ্ছি না। কয়েকবছর লস দিয়েছি। এখন আর লস দিই না। এ চামড়া ব্যবসায় ট্যানারির কোনো লস নাই। আমরাও ঠিকঠাক মতো সময়ে বিক্রি করতে পারলে লাভ করত পারি। কিন্তু যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করতে আনে, তারা লসে থাকে। কিন্তু আমরা চাইলেও নিজে লস দিয়ে তাদের তো লাভ দিতে পারি না।’
ট্যানারির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন ঢাকার ট্যানারিগুলো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে না। সপ্তাহখানেক পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। তবে দুই মাসের মধ্যে আমরা চামড়া বিক্রি করতে না পারলে এগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নাই। চট্টগ্রামে ট্যানারি তো নাই বললেই চলে। রিফ ল্যাদার থাকলেও তারা আমাদের চামড়া নেয় না। তারা আড়তদার সমিতির নেতা দেখে দেখে, তাদের কাছ থেকে চামড়া নেয়।’
ওই সময় আবুল হোসেন নামে আরেক চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ‘সরকার না চাইলে এ ব্যবসা টিকবে না। যেকোনো ব্যবসার মূল জিনিস হলো কাঁচামাল। এখানে যারা চামড়া আনছে, তারা দাম পাচ্ছে না। অনেকে লসও দিচ্ছে। সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাড়াড়ে গেলে দেখেবেন,কত চামড়া নষ্ট হয়েছে। গতকাল (সোমবার) রাতে অনেকে চামড়া ফেলে দিয়েছে। দাম শুধু নির্ধারণ করে দিলে হবে না। তদারকিও করতে হবে। ট্যানারিগুলো সরকারের কথা শুনে না। এরপরও সরকার তাদের সঙ্গে কথা বলে। এভাবে হলে এই ব্যবসা টিকবে না।’
চামড়ার দাম কম পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম পেয়েছেন। তাঁরা ৭০০ টাকা পর্যন্ত দরে বড় চামড়া কিনে নিয়েছেন। কিছু ব্যবসায়ী পরিবেশ নষ্ট করার জন্য দাম না পাওয়ার কথা বলেছেন।’