চার হাজার রোজাদারের ইফতারের আয়োজন যেখানে
বিশাল হাঁড়িতে সিদ্ধ করা হচ্ছে ছোলা। পাশেই বড় বড় কড়াইয়ে একে একে ভাজা হচ্ছে পেঁয়াজু, বেগুনি ও আলুর চপ।
নগরের কাজীর দেউড়ির আবুল হোসেন বাবুর্চির নেতৃত্বে সাতজন সহকারী বাবুর্চি দ্রুত হাতে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রতিদিন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের ইফতারের জন্য এভাবেই তৈরি হচ্ছে ২ হাজার মানুষের ইফতার।
এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা মসজিদের খতিব মাওলানা ছাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানী।
সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান, শ্রেণি-পেশার ভেদাভেদ ভুলে এখানে প্রতিদিনই ইফতার করে থাকেন হাজারো মানুষ। যুগের পর যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে বাঁধা এমন ইফতারের আয়োজন প্রসঙ্গে কথা হয় শাহী জামে মসজিদের খতিবের সহকারী মোহাম্মদ হাছান মুরাদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর রোজার প্রথম দিন থেকে আমাদের ইফতার আয়োজন শুরু হয়। রোজার প্রথম সপ্তাহে দেড় থেকে দুই হাজার এবং এরপর থেকে তিন থেকে চার হাজার রোজাদারের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয় ইফতারি। টাটকা ও স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারি যাতে সবাই খেতে পারেন সেই চেষ্টা করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে ইফতারের নানান আইটেম তৈরির কাজ শুরু হয়।
এদিকে আসরের নামাজের পর থেকেই মসজিদে ইসলামিক আলোচনা ও বারান্দায় রোজাদারদের মধ্যে শুরু হয় ইফতার বণ্টনের কাজ। একই মসজিদে যোহরের নামাজের পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ধর্মীয় ও মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার মানুষের একসঙ্গে ইফতার আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে এ মসজিদে। তবে রোজা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিন-চার হাজার রোজাদার একসঙ্গে ইফতারে অংশগ্রহণ করেন। যেখানে ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই পাশাপাশি বসে ইফতার করবেন। প্রত্যেক রোজায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও বিভিন্ন মসজিদের খতিবরা আলোচক হিসেবে থাকেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিয়মিত ইফতারসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খেজুর, শরবত, ছোলা, মুড়ি, জিলাপি, আলুর চপ, ছমুছা, অন্থন, পেঁয়াজু ইত্যাদি। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে নানান ব্যক্তি আপেল, কমলা ও আম ইত্যাদি মৌসুমি ফল এবং বিরিয়ানিও পরিবেশন করেন।
১৯৯৬ সাল থেকে এ মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা ছাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানী। ঐতিহ্যবাহী জুমা মসজিদের খতিবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ছোট পরিসরে ২০০১ সাল থেকে শুরু হলেও বড় পরিসরে ২০০৮ সাল থেকে ধনী-গরিবের বৈষম্যহীন সুবিশাল ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে। মাঝখানে গত ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা কারণে একসঙ্গে ইফতার আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছিল। ধনী-গরিবের বৈষম্যহীন ইফতারে নগরের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সেখানে সৃষ্টি হয় সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য পরিবেশ।
ইফতার আয়োজকরা জানিয়েছেন, সারি সারি প্লেটে রাখা ইফতারি সামনে নিয়ে বসে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মসজিদের বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন শত শত মানুষ। একসাথে ইফতারে বসার ক্ষেত্রে ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ নেই। পুরো রমজান মাসজুড়েই এই আয়োজন চলবে।