দেশজুড়ে

চিঠি-কাফনের কাপড় পাঠিয়ে ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হত্যার হুমকি

একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ফুলবাড়ীগেট শাখা থেকে রোববার (২৪ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে ফোনকলে জানানো হয় আপনাদের নামে ডাকে চিঠি এসেছে। কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ফোনকল পেয়ে আড়ংঘাটা থানার তেলিগাতী কুয়েট রোডে অবস্থিত খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ১২ প্রশিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী চিঠি রিসিভ করে একে একে চিঠির খামগুলো খুলে সবার চোখ সানাবড়া হয়ে যায়।

চিঠির ভেতর এক টুকরো সাদা কাগজের সঙ্গে পিন মারা কাফনের কাপড় সাদৃশ্য। সাদা কাগজে লেখা ‘প্রস্তুত থাকিস’। এ ধরনের চিঠি পেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ১০ জন ইন্সট্রাক্টর, একজন চালক, একজন অফিস সহকারীর ভেতর ভয় ও আতঙ্ক দেখা দেয়।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির চিফ ইন্সট্রাক্টর মো. রিয়াজ শরীফ আড়ংঘাটা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

হুমকির চিঠি পাওয়া প্রতিষ্ঠানের ১০ জন ইন্সট্রাক্টর হলেন- মো. রিয়াজ শরীফ, সৈয়দ মো. কামাল উদ্দিন, মো. মাসুদুল ইসলাম, মো. মাহাবুবুর রহমান, মো. জোবায়দুর রহমান, মো. মরুফ আহমেদ, মো. আব্দুল হামিদ, মো. হযরত আলী বুলেট, উন্মে হাবিবা ইসলাম, পলক কুমার বিশ্বাস। এছাড়া অফিস সহকারী মো. মনিরুল হক তালুকদার (রাজ) ও চালক মো. আমিনুর সরদার। হুমকি পাওয়া শিক্ষকরা জানিয়েছেন, যাদের নামে এ ধরনের চিঠি এসেছে তারা সবাই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন।

প্রতিষ্ঠানের চিফ ইন্সট্রাক্টর রিয়াজ শরীফ আড়ংঘাটা থানায় করা ডায়েরিতে উল্লেখ করেন ২৪/০৩/২০২৪ তারিখ সময় অনুমান দুপুর ১টা ৩৩ মিনিটে একটি কুরিয়ার সার্ভিস ফুলবাড়ীগেট শাখা থেকে মোবাইল ফোনকলের মাধ্যমে আমিসহ আরও ১১ জনের নামে ডাক আসছে মর্মে জানায়। আমিসহ অন্যরা ডাক রিসিভ করি এবং ডাক খুলে দেখতে পাই যে, ‘প্রস্তুত থাকিস’ লেখা সম্বলিত একটি সাদা কাগজের সঙ্গে এক টুকরো সাদা কাফনের কাপড় সংযুক্ত আছে।

এ ঘটনার জন্য প্রতিষ্ঠানের চিফ ইন্সট্রাক্টরসহ অন্যরা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে দায়ী করছেন।

প্রতিষ্ঠানের চিফ ইন্সট্রাক্টর বলেন, বিষয়টি আমরা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে জানিয়েছি। তিনি লিখিত দিতে বলেছেন। বিষয়টি জানার জন্য প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের ফুলবাড়ীগেট শাখা অফিসের স্টাফ আব্বাস বলেন, আড়ংঘাটা থানার তেলিগাতীতে অবস্থিত খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ১২ শিক্ষকের নামে ঢাকার গুলশান-২ অফিস থেকে গত ২৩ মার্চ চিঠিগুলো বুকিং করা হয়েছে। ফুলবাড়ীগেট শাখা অফিস থেকে আমরা ২৪ মার্চ চিঠিগুলো ডেলিভারি দেই। খামের ওপরে লেখা আছে খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ঠিকানা সিটি ব্যাংক এন এ লোন শাখা ১০৯, গুলশান অ্যাভিনিউ ঢাকা-১২১২। খামের ওপর একটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া আছে।

তিনি বলেন, যে অফিস থেকে চিঠিটি বুকিং করা হয়েছে সেখানে আমাদের চিঠি-কাফনের কাপড় পাঠিয়ে ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হত্যার হুমকি সিসি ক্যামেরা আছে। কে পাঠিয়েছেন সেটি শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।

আড়ংঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান আল মামুন বলেন, যাদের হুমকি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে তারা থানায় এসেছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে থানায় একটি জিডি এন্টি হয়েছে। জিডির আলোকে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা বিষয়টি উদঘাটনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। কুরিয়ার সার্ভিসের চিঠিগুলো কারা কোথা থেকে পাঠিয়েছেন এ ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নেবো। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এ তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হবো।

এ বিষয়ে জিডি তদন্তকারী কর্মকর্তা আড়ংঘাটা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফুল হায়দার বলেন, প্রতিষ্ঠানের ১২ জন শিক্ষককে কুরিয়ারযোগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির মধ্যে একটি সাদা কাগজ যাতে লেখা আছে প্রস্তুত থাকিস এবং সাদা একটি কাপড়ের টুকরো সেটা কাফনের কাপড় কিনা তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d