চুন্নুকে ব্যারিস্টার সুমনের পাল্টা জবাব
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সঙ্গে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর তর্ক বেশ তুঙ্গে। একে অপরকে নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন।
চুন্নু সংসদে সুমনের বিচার চাওয়ার পর বুধবার (৮ মে) আদালত প্রাঙ্গণে পাল্টা ক্ষোভ ঝাড়লেন সুমন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন সরকারি বরাদ্দ এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব ফেসবুকে দিয়েই যাবো। আমি বুঝতে পারছি না, স্বচ্ছতার মধ্যে সমস্যাটা কোথায়! আমি যদি স্বচ্ছ হতে চাই, যে বরাদ্দ পাই, এটা যদি আমি বলে দিতে চাই, এখানে এমপি হিসেবে কী অপরাধটা আমি করেছি? আমার দুঃখ হয়েছে, তার এলাকার মানুষের জন্য, যাদের কাছ থেকে তিনি এমপি হয়ে সংসদে এসেছেন। ওই এলাকার মানুষের অধিকার নেই তাদের এমপি কত টাকা বরাদ্দ পান, সেটা জানার।
সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ চুন্নু স্পিকারের কাছে বিচার দিয়েছেন। যেহেতু পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি কথা বলেছেন, সেহেতু উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাইনি বলে জানিয়েছেন সুমন।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে তিনি বিরোধিতা করবেন সরকারি দলের, কিন্তু তিনি বিরোধিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর। কী বিষয়ে করছেন? তার তো আরও খুশি হওয়ার কথা যে, আমরা আমাদের হিসাব দেওয়া শুরু করেছি। চুন্নুর বক্তব্য ছিল, আমি যেন কোনোভাবেই ফেসবুকে না জানাই, কে কত টাকা বরাদ্দ পাই।
শাড়ি প্রসঙ্গ টেনে এনে সুমন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলাকাতে শাড়ি বণ্টন করার জন্য দিয়েছিলেন। এটা যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার, এটা কী আমি বলবো না? এটা কী আমি লুকিয়ে রাখবো, এটা কী আমি বিক্রি করে দেবো? আমি কিন্তু বারবার বলেছি, এমপি পদ কিন্তু আমার পেশা না। আমি সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার হিসেবে কাজ করি। আমি কথা দিয়েছি, এমপি হিসেবে একটি টাকাও হারাম খাবো না। তাই যে টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওবা, সেটা আমি তুলে ধরবো।
এই টাকার কথা বলে দেওয়ার কারণে মুজিবুল হক চুন্নুর সমস্যা হচ্ছে দাবি করেন সুমন।
চুন্নুর বুদ্ধির প্রশংসা করে সুমন বলেন, তিনি বুদ্ধি করে আরেকটা কাজ করেছেন, বাকি এমপিদের দলে টানার জন্য যে, ৩৪৯ জন এমপির বদনাম হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। কী আশ্চর্যের ব্যাপার, একটা মানুষ এমপি হওয়ার পর তার নামে আসা বরাদ্দটা বলবে না? আমি বলে দেব। আমার মনে হয়, তার রাজনীতি করাটাই পেশা। এটা থেকে তিনি সবকিছু নির্বাহ করেন কি না আমার জানা নেই। তার আলাদা কোনো পেশা থাকলে তিনি এটা নিয়ে চিন্তা করতেন না।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত এক আলোচনায় ব্যারিস্টার সুমনকে তুলোধুনা করেন চুন্নু।
ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ইঙ্গিত করে চুন্নু জাতীয় সংসদে বলেন, আমাদের একজন সংসদ সদস্য, নামটা বলতে চাই না। তিনি নতুন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ফেসবুকে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমরা সবাই ভুক্তভোগী। এমপিরা কত টাকা বেতন পান? তারা তো বলেন না, গোপন করেন। তিনি বলেছেন, এক লাখ ৭২ হাজার টাকা বেতন (মাসিক) পেয়েছেন। আমরা কত টাকা বেতন পাই, এটা তো লুকানোর কিছু নেই, সংসদের ওয়েবসাইটে গেলে পাওয়া যাবে। এরপর তিনি আরও বলেছেন, তিন মাসের মধ্যে ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। সেটা কীভাবে পেলেন? তিন কোটি টাকা গমের জন্য, আর বাকি ২৫ কোটি টাকা পেয়েছেন রাস্তার জন্য।
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে চুন্নু বলেন, এই ২৮ কোটি টাকা কী আমি পেয়েছি? আপনি (স্পিকার) পেয়েছেন? সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী কী পেয়েছেন? এরই মধ্যে ফেসবুক দেখে আমাকে অনেকেই বলছেন যে, ২৮ কোটি টাকা পেয়েছেন, এই টাকা কই? তিনি বলেছেন, ২৫ কোটি টাকা পেয়েছেন, কিন্তু আমরা তো পাইনি। এবার পাঁচ বছরের জন্য ২৫ কোটি টাকার প্রকল্পের নাম দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আগামী ৫ বছরের জন্য কয়টা প্রকল্প করব, তার নাম দিয়েছি আমরা। টাকার সঙ্গে তো আমার কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগ জরিপের পর টেন্ডার করে, তারপরে তারা কাজ ও বাস্তবায়ন করে।
সুমনকে ইঙ্গিত করে চুন্নু আরও বলেন, ওই সংসদ সদস্য বলেছেন, আমরা ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। শুধু তাই না, তিনি আরও বলেছেন যে, এমপি হলে যদি এত লাভ হয়, তাহলে আরও আগে এমপি হতাম। এটা তো বড় ব্যবসা। আপনি (স্পিকার) এ সংসদের অভিভাবক। তার কথায় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ ৩৪৯ জন এমপির সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে। যদি এ ধরনের কথায় ভুল বার্তা যায়, বিষয়টা আপনি দেখতে পারেন।
সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করার জন্য সুমন এমন কাজ করছে বলে ইঙ্গিত করেন চুন্নু। এ সময় তিনি ৩৪৯ এমপির ইজ্জত রক্ষার জন্য সুমনকে ডেকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান স্পিকারের কাছে।