চট্টগ্রামসীতাকুণ্ড

ছেলের আয় লাখ টাকা, তবু বৃদ্ধাকে করতে হয় ভিক্ষা

প্রবাসে থেকে লাখ টাকা আয়ের পরও খবর নেন না মা, স্ত্রী ও সন্তানের। যদিও বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে ছিল তাঁর তৃতীয় বিয়ে। এর আগে, প্রথম দুই স্ত্রীকে তালাক দিয়েই বর্তমান স্ত্রীকে বিয়ে করে ঘরে তুলেন। সেই ঘরে তাঁর একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। যার বয়স এখন পাঁচ বছর। এই কন্যা সন্তান জন্মের আগেই বিদেশ পাড়ি দেন আলা উদ্দিন। এরপর গত ছয় বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের জন্য পাঠায়নি এক টাকাও।

উল্টো এখন মাকে ফোন করে বারবার জানাচ্ছে— ‘তৃতীয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যবস্থা করতে’। এতে রাজি না হওয়ায় মাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে ছেলে। আলা উদ্দিনের এমন স্বভাবের কারণে বিয়েটা তাঁর ‘নেশায়’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য পরিবার ও স্থানীয়দের। ছেলের এমন স্বভাবের কারণে মা করেন ভিক্ষাবৃত্তি

আলা উদ্দিনের এমন স্বভাব ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে মা দেলোয়ারার। ছেলে পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণ না দেওয়ায় সত্তোরোর্ধ দেলোয়ারা এখন ভিক্ষাবৃত্তি করেন। গত পাঁচ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করেই ভরণ-পোষণ চালিয়েছেন নিজের, ছেলের বউ ও নাতনির। অথচ বয়সের ভারে হাঁটতেও কষ্ট হয় তাঁর। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রকম রোগ। তবুও অসুস্থ শরীরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় ক্লান্ত পায়ে হেঁটে মানুষের দ্বারে-দ্বারে যাচ্ছেন। এভাবে সারাদিনে ভিক্ষাবৃত্তি করে যা পান; তা দিয়েই জীবন চালিয়ে নেন তিনি।

সবশেষ ভিক্ষাবৃত্তির জন্য উপজেলার নুনাছড়া বটতল পন্থিছিলা ও শেখপাড়া এলাকায় যান দেলোয়ারা। এসময় দেলোয়ারার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। ‘এ বয়সে কেন ভিক্ষাবৃত্তি করছেন’— এমন প্রশ্ন করতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দেলোয়ারা। তিনি বলেন, ‘আমার আপন বলতে একমাত্র ছেলে মো. আলা উদ্দিন। সে এখন সৌদি আরব থাকে। মাসে ৯০ হাজার টাকা বেতন পায়। তবে গত ৬ বছর ধরে একটি টাকাও দিচ্ছে না। শুধু আমার নয়; তাঁর (ছেলের) নিজের স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ের জন্যও কোন খরচাপাতি দেয় না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d