জটিল সমীকরণে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত
গাজার হাসপাতালে মঙ্গলবারের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০জন মানুষ নিহত হয়েছেন। এরপর বুধবার রাতেও গাজার আরেকটি হাসপাতালের কাছে হামলা হয়েছে। এ মাসের সাত তারিখ থেকে শুরু হওয়া সংকট ক্রমশঃ উত্তপ্ত হচ্ছে। সর্বশেষ গাজায় হাসপাতালে বিমান হামলার পর সংকট নিরসনের সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ হয়ে গেছে। এদিকে, ইসরায়েল বা হামাস কারো মধ্যেই সমঝোতার কোন আভাস দেখা যাচ্ছে না।
চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে কয়েক হাজার মানুষের। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এ সংঘর্ষকে ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব। একদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরব, রাশিয়া, চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ফিলিস্তিনের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
ইরান এরই মধ্যে অবরুদ্ধ গাজায় চালানো হামলার জন্য ইসরায়েলকে বড় আঘাত সইতে হবে বলে সতর্ক করেছে। রাশিয়াও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। এমতাবস্থায় এক জটিল সমীকরণে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ হওয়া জরুরি। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ অন্য দেশগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। দুই রাষ্ট্রের যে ফর্মুলা তার বাস্তবায়নই পারে দীর্ঘদিন ধরে চলা এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আসলে দেখা দরকার আমেরিকা কী করে। কারণ সমাধান আমেরিকার হাতে। এখন আমেরিকা কতদিন এটা জিইয়ে রাখতে চায় সেটা দেখা দরকার। তবে এবার যেটা হয়েছে, মূল আমেরিকাতেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এমনকি জিউস কমিউনিটির লোকজনও আমেরিকায় প্রতিবাদ করছে। দেখা দরকার কতখানি সেটা বাড়ে। গাজায় এখন যেটা হচ্ছে সেটা হলো গণহত্যা; সংঘটিত হচ্ছে চোখের সামনে। কখনো যদি গণহত্যার বিচার হয়, তখন হয়তো আমেরিকার যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা ঝামেলায় পড়বেন। ইসরায়েলের ভেতরে কী হয় সেটাও দেখা দরকার। নেতানিয়াহু আদৌ ক্ষমতায় থাকবে কিনা। তবে সমাধান তো আসলে বহু আগেই অসলো এগ্রিমেন্টে বলা ছিল। যেটা ইসরায়েলও মেনেছিল, ফিলিস্তিনও মেনে নিয়েছিল। যদিও আজ ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরা ইসরায়েলের সেই প্রধানমন্ত্রীকে মেরে ফেলেছিল। কিন্তু দুই রাষ্ট্র নীতিতে যেতেই হবে, ওটাই হলো সমাধান।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে মতানৈক্য থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো একসুরে কথা বলছে। এ প্রসঙ্গে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এটাও বলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার আর একক ক্ষমতা নেই। সেখানে চীন নতুন প্লেয়ার। যেহেতু সৌদির সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক হয়েছে। এমনকি সিরিয়াও এবার আরব লিগে যোগ দিয়েছে। সৌদি তো স্পষ্ট বলেই দিয়েছে, ফিলিস্তিনের সমাধান ছাড়া সম্পর্ক উন্নয়ন হবে না। এটাও একটা বিশাল বার্তা। এখন আমেরিকাকেই বড় আকারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, সে কী করবে? মনে রাখতে হবে, জো বাইডেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আছে। সামনে নির্বাচন আছে, অনেকগুলো বিষয় আছে। তবে যেটা দেখা যাচ্ছে, গাজায় গণহত্যা হচ্ছে এবং তাতে পশ্চিমা দেশগুলো জড়িত।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মাঝে দূরত্ব কমেছে। এর বড় উদাহরণ ইরানের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক এবং সিরিয়ার আরব লিগে যোগ দেওয়া। এ বার্তা আমেরিকার কাছে না যাওয়ার কথা নয়। সেজন্য আমার মনে হয় না এবার আর কোনো উপায় আছে দুই রাষ্ট্র ফর্মুলা বাস্তবায়ন ছাড়া। তবে যেহেতু ইসরায়েল আক্রান্ত হয়েছে, তাই রাতারাতিই এটা হচ্ছে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, এটাই সমাধান। না হলে এরপর আরও বড় আকারে আক্রান্ত হবে। তিনি বলেন, আমেরিকা বা ইসরায়েলের ২০ বছর আগের সে অবস্থা নেই। ওদের যে ইন্টেলিজেন্স কাঠামো হামাস ভেঙে দিয়েছে সেটা তো স্পষ্ট। প্রচুর ইসরায়েলি দেশও ছাড়ছে। সেজন্য বোঝাই যাচ্ছে, যতই সিকিউরিটি ডোম করা হোক আর ইন্টেলিজেন্স দম্ভ যতই হোকÑ তা ভেঙে দেওয়া যায়। আর যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে একমাত্র দুই রাষ্ট্র নীতিই উপায়। কেননা গণহত্যা যেটা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আমেরিকা-ইসরায়েলের জনগণও রাস্তায় নেমেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুর কবির বলেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের নানা দিক আছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, গাজা উপত্যকায় মানুষ মারা যাচ্ছে। সুতরাং এ সংঘর্ষ এখনই থামানো জরুরি। আমি মনে করি, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকা দরকার। ৭৫ বছর ধরে এ সংগ্রাম চলছে। এ কথা ঠিক, ফিলিস্তিনিদের ওপর বড় ধরনের অবিচার হচ্ছে।
হুমায়ুর কবির বলেন, ইরান এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজায় চালানো হামলার জন্য বড় আঘাত সইতে হবে ইসরায়েলকে। ইরান যদি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তাহলে রাশিয়াও এতে সংশ্লিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইল সফর করেছেন। কিন্তু আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রও চাচ্ছে না যুদ্ধ বিস্তৃত হোক। এরই মধ্যে বাইডেনের উদ্যোগে মিসর দিয়ে গাজা উপত্যকায় ত্রাণ গেছে। সংঘর্ষ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবকে উদ্যোগ নিতে হবে। যুদ্ধ বন্ধের পর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকে যেতে হবে। আমি মনে করি, দুই রাষ্ট্রের যে ফর্মুলা সেটিই সমাধানের একমাত্র পথ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, এটা তো আসলে ফিলিস্তিনের সরকার নয় বরং একটা গ্রুপের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘর্ষ হচ্ছে। আমি মনে করি, আরব রাষ্ট্রগুলো মুখে সমর্থন দিলেও কেউ সরাসরি এটাতে যুক্ত হবে না। কেননা একটা শান্তি প্রক্রিয়া অলরেডি চলছিল। এভাবে সংঘর্ষের ফলে অতীতেও যেভাবে শান্তিপ্রক্রিয়া স্তিমিত হয়ে আসছিল, এবারও তাই হতে পারে। তবে এতে লাভ যেটা হবে, সেটা হামাসের হবে। কারণ যে শান্তি প্রক্রিয়া হচ্ছিল সেটা বিলম্ব হয়ে গেল। আবার ফিলিস্তিনে হামাস যেমন উগ্রবাদী সংগঠন, তেমনি ইসরায়েলেও নেতানিয়াহুর সঙ্গে যেসব ছোট ছোট দল আছে তারাও উগ্রবাদী। তারাও এই শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চায় না। সুতরাং তাদের জন্যও এটা একটা অজুহত হয়ে গেল যে, এভাবে হামাস যখন আক্রমণ করেছে, ওদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা হবে না।
ইশফাক ইলাহী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আলোচনা এক পা এগুলে দুপা পিছিয়ে যায়। হামাসের মতো সংগঠন এবং ইসরায়েলের ভিতরে যেসব উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল আছে তারা এটা চাচ্ছে না। তবে এটা ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না কখনো। তো ইসরায়েলও ধ্বংস হবে না আর ফিলিস্তিনিদেরও সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা চাইব, যুদ্ধ যত শিগগির বন্ধ হোক। কারণ হামাসের ধ্বংসও সম্ভব নয়, কারণ তারা জনগণের সঙ্গে মিশে আছে। এমন নয় তাদের অনেক জনপ্রিয়তা আছে। তবে তারা শক্তিশালী সংগঠন এবং চিরাচরিত বোমা বা ট্যাংক দিয়ে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমার মনে হয়, যেভাবেই হোক যুদ্ধবিরতি করে শান্তি আলোচনা করতে হবে। তবে এমন একটা প্রস্তাব আসতে হবে যেটা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য।
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ইসরায়েল একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং তার সামরিক শক্তি এসব আরব দেশ থেকে অনেক অনেক বেশি। তবে এখানে আরেকটা শক্তি আছে, যা প্লে করছে ইরান। দেশটি হামাসকে অস্ত্র সাহায্য দেয়, হিজবুল্লাহকেও চাঙ্গা করতে চায়। তাদেরও একটা ইন্টারেস্ট আছে। আরব বিশ্ব না হলেও অন্তত ফিলিস্তিনে একটা পার্ট প্লে করার জন্য তারা উদগ্রীব। ইশফাক মনে করেন, ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে ক্লিনটন প্রশাসন কিংবা পরে বারাক ওবামা প্রশাসনের সময় ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানের একটা সুযোগ ছিল। তবে উগ্রপন্থিদের জন্য সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি। এর সমাধানে দুই পক্ষের আলোচনা হতে হবে, যেটা হামাসকে দিয়ে হবে না।
এর আগে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হামাস বন্দুকধারীরা অন্তত ১৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল, যাদের গাজার বিভিন্ন গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্করাও রয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েল যদি এখন গাজায় পূর্ণ মাত্রার অভিযান চালায়, তাহলে এসব জিম্মি বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে?
ইসরায়েল একটি স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে গাজা সীমান্তে সেনা মোতায়েন, ভারী আর্টিলারি এবং ট্যাংক জড়ো করেছে তারা।
ইসরায়েলে হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা অতর্কিত হামলা চালানোর পর থেকে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল।
পেছন থেকে কাতার, মিশর ও সম্ভবত আরও কয়েকটি দেশ জিম্মিদের একাংশের মুক্তির জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
একটি আইডিয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে যে হামাস নারী ও শিশু বন্দীদের মুক্তি দেবে এবং বিনিময়ে ইসরায়েল ৩৬ নারী ও কিশোর বন্দীকে ছেড়ে দেবে।
ইসরায়েলের রেইচম্যান ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট ফর পলিসি অ্যান্ড স্ট্রাটেজির সিনিয়র বিশ্লেষক মাইকেল মিলস্টাইন বলছেন যে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে কোন মূল্যে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের ফেরত পাওয়াই হতো ইসরায়েলের বড় অগ্রাধিকার। কিন্তু এখন তাদের অগ্রাধিকার হলো সামরিক হুমকি হিসেবে হামাসকে নির্মূল করা।
উভয় পক্ষেই উত্তেজনা ও ক্রোধ বাড়ছে। ইসরায়েল ও হামাস-কারও মধ্যেই সমঝোতার মেজাজটাই নেই।
ইসরায়েলিরা হতভম্ব ও ক্ষুব্ধ যে বন্দুকধারীরা কীভাবে সহজেই দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় প্রায় বারশো মানুষকে হত্যা করতে পারলো।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা, শুধু হামাস নয়, শনিবারের পর থেকে গাজায় দুই হাজারের মতো বিমান হামলার আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুতে ক্রোধে ফুঁসছে। গাজায় তেল, বিদ্যুৎ, পানি ও ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কোন সতর্কতা ছাড়া বিমান হামলা চালিয়ে ইসরায়েল কোন বেসামরিক নাগরিক হত্যা করলে জবাবে এর প্রতিটির জন্য একজন করে জিম্মিকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। তবে এমন কিছু তারা করেছেন তেমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
একই সাথে ইসরায়েলের দিক থেকেও সংযমের কোন আভাস নেই। গাজার বড় অংশকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে।
তবে মাইলস্টেইন বিশ্বাস করেন যে হামাস হয়তো নারী, শিশু ও বয়স্কদের আটকে রাখতে আগ্রহী নাও হতে পারে।
কারণ ব্যাপক বিমান হামলার মধ্যে তাদের উচ্চ মাত্রার যত্ন নেয়া সহজ নাও হতে পারে। হামাস তাদের অবস্থানও গোপন রাখার চেষ্টা করছে যাতে করে সেখানে ইসরায়েল কোন তথ্য না পেতে পারে।
এর পরিবর্তে, হামাস চাইবে তাদের হাতে জিম্মি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে পূর্ণ সুবিধা আদায় করতে। আলোচনা হলেও যাতে এদের মুক্তির বিনিময়ে বড় কিছু আদায় করা যায়।
জিম্মি প্রসঙ্গে বড় ধরনের সংকটে ইসরায়েলি সরকার। এখন কী সামরিক উদ্ধার অভিযান হবে, যেখানে কিছুটা ঝুঁকিও থাকবে? নাকি এটা দীর্ঘায়িত হবে, যতক্ষণ না হামাস বিমান হামলায় দুর্বল হয় যা তাদের একটি সমঝোতায় আসতে আগ্রহী করে তুলবে।
এসব বিকল্পগুলোর কিছু ঝুঁকি আছে। যদিও জিম্মিদের টানেল বা বাঙ্কারে রাখা হয়েছে বলে মনে করা হয়, তারপরেও বিমান হামলা থেকে তারা সুরক্ষিত নাও হতে পারে।
এছাড়া জিম্মিকারীরা তাদের মেরে ফেলতে পারে- এ সম্ভাবনা সবসময়ই থেকে যায়। রাগের কারণেও এটি হতে পারে, আবার তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে-এই ভয় থেকেও হতে পারে।
নাইজেরিয়াতে এমনটি ঘটেছিলো ২০১২ সালে। যুক্তরাজ্য-নাইজেরিয়ান স্পেশাল ফোর্স জিহাদিদের হাত থেকে দুজন জিম্মিকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছিলো।
ইসরায়েল দ্রুতই একটি হোস্টেজ সিচুয়েশন রুম স্থাপন করেছে। হামাস যাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে গেছে, তাদের বিস্তারিত তথ্য নেয়া হয়েছে।
যে জিম্মিদের ইসরায়েলের ভূখণ্ডেই রাখা হয়েছিলো, বন্দুকধারীদের হত্যা করে তাদের মুক্ত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও পুলিশের স্পেশাল ফোর্স। তাদের জিম্মিকারী হামাসের সবাইকে মারা হয়েছে।
মাইকেল মিলস্টাইন বিশ বছর ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলছেন যে ‘গাজার সব ঘরবাড়ি ও রাস্তার তথ্য আমাদের হাতে নেই’। সেখানেই হামাস নিজেদের ও তাদের জিম্মিদের ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আড়াল করে রাখতে সক্ষম হবে।
জিম্মি উদ্ধারে ইসরায়েলের বিশেষ দক্ষতা অনেকবার প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৫৭ সালে তৈরি করা গোপন সায়েরেত মাতকাল ইউনিট অনেকটা আমেরিকার ডেল্টা ফোর্স কিংবা ব্রিটেনের এসএএস’র মতো।
১৯৭৬ সালে উগান্ডার বিমানবন্দরে ছিনতাই হওয়া একটি বিমান থেকে এর কমান্ডোরা জিম্মিদের উদ্ধার করেছিলো।
ওই ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন জোনাথন নেতানিয়াহু। তিনিই কমান্ডোদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি যিনি ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। এখনকার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার ভাই।
এখন পুরো সিদ্ধান্তই তার হাতে যে আলোচনার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করবেন নাকি শক্তি প্রয়োগ করে করবেন।