জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও ‘স্থির’ রেমিট্যান্স
যে হারে মানুষ বৈধপথে কাজের সন্ধানে বিদেশে যাচ্ছে, সে হারে প্রবাসী আয় আসছে না। আগের বছরগুলোর তুলনায় তিন বছর ধরে বিদেশে কর্মী পাঠানো ৭৩ শতাংশ থেকে ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু প্রবাসী আয় আগের জায়গায় রয়ে গেছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে কাজের সন্ধানে বৈধপথে বিদেশে যান ছয় লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী। একই সময়ে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে প্রবাসী আয় আসে দুই হাজার ২০৭ কোটি আট লাখ ৭০ হাজার ডলার।
২০২২ সালে বিদেশে যান ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। একই বছরে প্রবাসী আয় আসে আসে দুই হাজার ১২৮ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার ডলার।
২০২৩ সালে বৈধপথে কাজের সন্ধানে বিদেশে যান ১৩ লাখ পাঁচ হাজার ৪৫৩ জন। প্রবাসী আয় আসে দুই হাজার ১৯৪ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল- এ চার মাসে বিদেশে যান তিন লাখ ২২ হাজার ২৩৭ জন। দেশে আসে ৮১১ কোটি ৭৬ লাখ ২০ হাজার ডলার।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২১ সাল থেকে প্রতি বছর প্রবাসে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু একই জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স।
করোনাভাইরাস মহামারির আগে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বর্তমানের চেয়ে ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ কম লোক বিদেশে যেতেন। তখন প্রবাসী আয় আসতো এক লাখ পাঁচ হাজার ডলার থেকে এক হাজার ৮০০ ডলার।
শ্রমিক বা কর্মী বিদেশে পাঠাতে না পারা এবং প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাজার-নির্ভর না হওয়ার কারণে বিদেশে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়ছে না বলে মনে করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কর্মী পাঠানোর সব চেয়ে বড় জায়গা সৌদি আরব। গত তিন বছরে প্রায় ১৭ লাখ কর্মী দেশটিতে যান। সেখানে আগের আরও যদি ১৫ লাখ কর্মী গিয়ে থাকেন, সব মিলিয়ে সৌদি আরবে কর্মীর সংখ্যা এখন ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। তিন বছর আগে সৌদি আরব থেকে ৫৭০ কোটি ডলার আসতো, নতুন করে ১৭ লাখ যাওয়ার পর এখন রেমিট্যান্স আসে চার বিলিয়নের কম, ৩৭০ কোটি ডলার।
শরিফুল হাসান বলেন, এককভাবে সবচেয়ে বেশি লোক যায় সৌদি আরবে। মোট প্রবাসে যাওয়া কর্মীর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সৌদি আরবে যান, সেখানে এই হলো অবস্থা। ঠিক একইভাবে যে লোক পাঠাচ্ছি, তা সংখ্যায় আসলে অনেক বেশি, কিন্তু দক্ষ নয়। দক্ষ লোক পাঠাতে পারছি না। পাশাপাশি প্রবাসী আয়ে ডলারের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলা বাজারে পার্থক্য রয়েছে, প্রবাসীরা তাদের আয় অনিয়মিত চ্যানেল বা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে দেশে পরিজনরা বেশি টাকা পাচ্ছেন।
একজন প্রবাসী তার আয় দেশে পাঠানোর সময় দেখেন, পাঠানো অর্থ কত দ্রুত যায়, ডলারের রেট কত, আর কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া পরিজনদের কাছে টাকা পৌঁছায় কি না। এসব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে (ডলার) রেট পাওয়া যায় কম, পৌঁছায় দেরিতে, নানা রকম ঝামেলা থাকে। এ জন্য প্রবাসীরা অনিয়মিত পন্থায় তাদের আয়ের অর্থ পাঠা। আর সে জন্য জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও প্রবাসী আয় যে হারে বেড়ে যাওয়ার কথা কথা ছিল, সে হারে বাড়েনি।