ধর্ম

জাকাত নামাজ-রোজার মতোই ফরজ ইবাদত

মাহে রমজান ইবাদতের মৌসুম। এ মাসে ইসলামের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালন করা হয়। ফজিলত, বরকত, ও রহমতে ভরপুর এ মাসে মুমিনের হৃদয়-মন সাওয়াবের ফোয়ারায় জেগে উঠে। রোজা ও জাকাত দুটি পর্যায়ক্রমিক ফরজ।

২য় হিজরিতে রোজা ফরজ হওয়ার পর পরই শাওয়াল মাসে জাকাত ফরজ হয়। আর মাহে রমজানে এ দুটি আনজাম দিতে হয়; এতে অতিরিক্ত সাওয়াব মিলে। অবশ্য, যে কারো যখনই তার গচ্ছিত সম্পদের বর্ষপূর্তি হবে তখনই তার জাকাত আদায় করে দিলে কোন আপত্তি নেই। হজরত ইবনে আকীল ‘আল ওয়াজেহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “জাকাত ফরজ হয়েছে রোজা ফরজ হওয়ার পর ”।

ইসলামে জাকাত নামক অর্থনৈতিক ইবাদতের বহু হুকম-আহকাম রয়েছে। কুরআন ও হাদিসে যে পদ্ধতি অনুসরণ করে যাকাত আদায় করার জন্য বলা হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন না করলে এ

ফরজ আদায় হবে না। জাকাত আদায়ের খাত সম্পর্কে আল্লাহ তাবারক ওয়া তা‘আলা বলেন, “জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী এবং মুসাফিরদের জন্য। এ হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়”- (সূরা আত তাওবা : আয়াত ৬০)।
সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ আর সাড়ে বায়ান্নো তোলা রৌপ্য এক বছর পর্যন্ত গচ্ছিত থাকলেই ব্যক্তির নিসাব পূর্ণ হয়। টাকার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্নো তোলা রৌপ্য অথবা এর বাজার মূল্যকে নিসাব হিসেবে গণ্য করা হয়। যাকাত প্রদানের হার হচ্ছে গচ্ছিত সম্পদের ২.৫%। আমাদের দেশে দেখা যায়, বহু লোক হিসাব-নিকাশ না করে গরিব প্রতিবেশীকে কিংবা মাদ্রাসা মসজিদে কিছু দান-সাদকা করেই যাকাত আদায়কারী সাজতে তৎপর হয়ে উঠে। আর অনেকে দিনক্ষণ ঠিক করে ডাক ঢোল পিটিয়ে অপরিকল্পিতভাবে গরিবদের মাঝে টাকা-পয়সা ও শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করে, তাতে অসহায় ভিক্ষুক-ফকিররা ঠেলাঠেলিতে পড়ে মারা যাবার ঘটনাও ঘটে। এ রকম পরিস্থিতির অবতারণা করা শরীয়ত সম্মত নয়।

যাকাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কেবল দারিদ্র্য বিমোচন নয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন এবং সম্পদের ভারসাম্য বিধান। সম্পদে কম বেশি করে কিংবা কোন ধরনের ছল-ছাতুরির আশ্রয় নিয়ে যদি যথাযথভাবে যাকাত আদায় করা না হয় তাহলে তার সমুদয় সম্পদ অপবিত্র হয়ে যাবে, পতিত হবে ধ্বংসের মুখে। হাদিস শরীফে এসেছে, “জাকাত যে মালের সাথে মিশ্রিত হয়ে থাকবে অবশ্যই তার বিপর্যয় ঘটবে।” (বাজ্জার-বায়হাকী)

নবী করিম সা. জাকাত আদায়ের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আল্লাহ পাক যাকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন সে যদি যাকাত আদায় না করে তাহলে কিয়ামতের দিন তা একটি বিষধর অজগরের রূপধারণ করবে যার দু‘চোখের উপর দুটি কালো চিহ্ন থাকবে। বলবে, আমিই তোমার ধন-মাল, আমিই তোমার সঞ্চয়।”

ইসলামী অর্থনীতির মূল উৎস জাকাত। সুতরাং জাকাত সংগ্রহকারী যে কোন নির্ভরযোগ্য ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারিভাবে পরিচালিত বাংলাদেশ যাকাত বোর্ডের উদ্যোগে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে দেশের প্রায় ৫০ লক্ষ জাকাত ও উশর দিতে সক্ষম ব্যক্তির কাছ থেকে সমুদয় জাকাত আদায় করে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হলে দেশ থেকে দরিদ্রতা দূর হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান, কেটে যাবে যাবতীয় অপ্রাপ্তি-অসন্তোষ। আল্লাহ পাক আমাদেরকে ইসলামের অপরিহার্য বিধান যাকাত সম্পর্কে আরো বিস্তারিত অধ্যয়নপূর্বক চুলচেরা হিসাব করে সম্পদের জাকাতদানের তৌফিক দান করুন। আমীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d