জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিফলন চায় কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড
কওমী মাদ্রাসা সমূহের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ (কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড)-এর যৌথ সভায় আলেম-ওলামারা জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটানোর দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের জামিয়া দারুল মাআরিফ মাদ্রাসায় আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস (কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড)-এর এক যৌথ সভায় ওলামারা এই দাবি জানান।
আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস (কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড)-এর সভাপতি ও জামেয়া পটিয়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষক দেশের প্রবীণ আলেম আল্লামা সুলতান যওক নদভীর সভাপতিত্বে বোর্ডের সাধারণ পরিষদ, মজলিসে শূরা ও পরীক্ষা কমিটির উক্ত যৌথ-অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত ছয় শতাধিক মাদ্রাসার প্রতিনিধি, বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, মজলিসে শূরার সদস্য ও দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
সভায় বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রতিনিধিরা ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বিগত সরকার দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। “আমরা বর্তমান সরকারের কাছে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
প্রতিনিধিরা বলেন, “কওমী মাদ্রাসা শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার ও নৈতিক চরিত্রে জোর দিয়ে থাকে। সম্প্রতি পটিয়া-হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় যেসব বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটে চলেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।” এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, “একটি কুচক্রী মহল নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে এবং কওমী মাদ্রাসাসমূহের শতবর্ষের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধূলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে।” কওমি মাদ্রাসায় এ ধরনের নেতিবাচক ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “আল্লামা সুলতান যওক নদভী শুধু বাংলাদেশের নয়, তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। আমরা দেশের এই শীর্ষ মুরব্বি ব্যক্তির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।” ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ বন্যাদুর্গত এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের ত্রাণ-তৎপরতা, কেন্দ্রীয় পরীক্ষার সুষ্ঠু আয়োজন ও বার্ষিক অর্থ-প্রতিবেদন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মহাসচিব আল্লামা ওবাইদুল্লাহ হামজার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বোর্ডের মহাসচিব আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামজার স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ইত্তেহাদের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা ফুরকান উল্লাহ খলীল, আল্লামা মুহাম্মদ মুসলিম, আল্লামা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ শফীক, ফেনী সিলোনিয়া আল্লামা সাইফুদ্দীন সাহেবের প্রতিনিধি মুফতি আহমদুল্লাহ, জামিয়া মোজাহের উলুমের মহাপরিচালক আল্লামা লোকমান হাকিম, বাঁশখালী চাম্বল মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা আবদুল জলীল, রাঙুনিয়া কোদালা মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা আবদুল কাদেরের প্রতিনিধি মাওলানা নুরুল কবীর, আল্লামা হাফেজ সালাহুল ইসলাম, মহেশখালী ঝাপুয়া মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা ফয়েজুল্লাহ, ঘোরকঘাটা মাদ্রাসার নির্বাহী মুহতামিম আল্লামা শামসুল হক, কক্সবাজার হ্নীলা মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা আফসার উদ্দীন চৌধুরী, আল্লামা মুফতি এনামুল হক, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মুহসিন শরীফ ও মাওলানা মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।