জান্নাতের সুসংবাদ যে ১০ ব্যক্তি দুনিয়াতেই পেয়েছিলেন
পৃথিবীর পরে যে জীবন আসবে তাতে সফল হবেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মানুষেরা।অনিবার্যভাবে জান্নাত কে পাবেন একথা বলা কঠিন।হতে পারে অসংখ্য আমল করেও ছোট্ট একটি খারাপ আমলের কারণে জীবনের সব নেক কাজ ধূলোয় মিলিয়ে যাবে। নেক আমলের পাল্লা একেবারে শূন্য হয়ে যাবে। তাই আমলের পাশাপাশি প্রত্যেক মুমিনের একান্ত কর্তব্য আপন রবের রহমত প্রত্যাশা করা।
নির্দিষ্ট করে কেউ জান্নাত লাভের কথা বলতে না পারলেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্যপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবি আছেন যারা পৃথিবীতেই জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ পেয়েছেন। তাদের বলা হয় আশারায়ে মুবাশশারা অথার্ৎ ১০ সুসংবাদপ্রাপ্ত। বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থে তাদের আলোচনা এসেছে। এখানে তাঁদের নাম-পরিচয় তুলে ধরা হলো।
আবু বকর সিদ্দিক (রা.): প্রকৃত নাম আব্দুল্লাহ ইবনে ওসমান ইবনে আবু কুহাফা আমর। উপাধি আতিক ও সিদ্দিক। পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর হাতে হজরত উসমান, যুবাইর, তালহা, আব্দুর রহমান ইবনে আউফসহ অনেক বড় বড় সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেন। মহানবী (সা.)-এর হিজরতের সাথি ছিলেন। ইসলামের প্রথম খলিফা ছিলেন এবং ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মহানবী তাঁর মেয়ে আয়েশা (রা.)-কে বিয়ে করেছিলেন।
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.): ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন এবং প্রায় ১১ বছর খেলাফত পরিচালনা করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর হাতে ইসলামকে শক্তিশালী করেন। মহানবী (সা.) তাঁর কন্যা হাফসাকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি মুসলিম খেলাফতকে বিভিন্নভাবে সংস্কার করেন এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী গঠন করেন। তাঁর খেলাফতকাল সব যুগের অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে পরিগণিত।
ওসমান ইবনে আফফান (রা.): ইসলামের তৃতীয় খলিফা ছিলেন এবং তাঁর খেলাফতকাল ছিল প্রায় ১২ বছর। তাঁর উপাধি ছিল যুন্নুরাইন বা দুই আলোর অধিকারী। তিনি সম্পর্কের দিক থেকে মহানবী (সা.)-এর জামাতা ছিলেন। মহানবী (সা.) প্রথমে তাঁর সঙ্গে এক কন্যার বিয়ে দেন। এরপর তিনি ইন্তেকাল করলে আরেক কন্যার সঙ্গে বিয়ে হয় এ জন্য তাঁকে যুন্নুরাইন বলা হয়।
আলী ইবনে আবি তালিব (রা.): মহানবী (সা.)-এর চাচাতো ভাই এবং কনিষ্ঠ জামাতা ছিলেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাবুক ছাড়া ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মহানবী (সা.)-এর মেয়ে ফাতেমা (রা.)-এর স্বামী ছিলেন। ইসলামের চতুর্থ খলিফা ছিলেন।
তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রা.): উহুদ যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে খুবই দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। শরীরের ২৪টি স্থানে কাফির কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় মহানবী (সা.) তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘তালহাতুল খায়র’ বা কল্যাণকামী তালহা। তিনি উষ্ট্রের যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন।
জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.): ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর রাস্তায় তরবারি চালিয়েছিলেন। তাঁর আকৃতিতে ফেরেশতারা বদর যুদ্ধে অবতরণ করেছিলেন। তিনি উষ্ট্রের যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন।
আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা.): মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে হাবশায় হিজরত করেছিলেন এবং ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর হাতে অনেক বিধর্মী ইসলাম কবুল করেন।
সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.): প্রথম আল্লাহর রাস্তায় তির নিক্ষেপ করেন। ইসলামের সব যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তিনি ইসলাম প্রচারের নিমিত্তে বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে মুসলমানেরা বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েন।
সাঈদ ইবন জায়েদ (রা.): বদর ছাড়া ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মদিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় মহানবী (সা.)-কে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন।
আবু ওবায়দাহ আল-জাররাহ (রা.): ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি উহুদ যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর চোয়ালে বিঁধে যাওয়া লৌহবর্ম দাঁত দিয়ে বের করেছিলেন। ফলে তাঁর সামনের দুই দাঁত পড়ে গিয়েছিল। ইসলামে তাঁর অবদান অপরিসীম।