জায়গা মেলেনি, নতুন ৪ স্ক্যানার বন্দরে পড়ে আছে ৫ মাস
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কেনা দুটি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার মেশিন চীন আমদানি করে স্থাপনের পর উদ্বোধন করে চালু করে দেওয়া হয়েছে। অথচ একই সময়ে চীনের একই প্রতিষ্ঠান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য আনা আরো চারটি কনটেইনার স্ক্যানার মেশিন গত পাঁচ মাসেও স্থাপন করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। মূলত বন্দরের সাথে স্ক্যানার বসানোর জায়গা নির্ধারণের কাজ শেষ না হওয়ায় ওই স্ক্যানারগুলো এখনো পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কাস্টমসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
চোরাচালান রোধ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য পরিবহন রোধে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪টিসহ অত্যাধুনিক ৬টি ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার বসানোর কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
স্ক্যানারগুলো ক্রয়ের ব্যপারে চীনা প্রতিষ্ঠান নাকটেক কোম্পানি লিমিটেডের সাথে গত বছরের (২০২৩ সাল) বছরের ৪ জানুয়ারি এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ছয়টি স্ক্যানার বসানোর জন্য এই প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ হয় ১৪৭ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। চীনা
প্রতিষ্ঠানটি স্ক্যানারগুলো স্থাপনের পর আগামী ৫ বছর সেগুলো রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করবে।
উল্লেখ্য, এই ৬টি কনটেইনার স্ক্যানার স্থাপনের কাজ শুরু হয় তিন বছর আগে ২০২১ সালে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২১ সালের সালের মার্চ মাসে প্রথমবার টেন্ডার আহ্বান করে। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ দরপত্র আহ্বান করার পর করোনাসহ বিভিন্ন গ্যাঁড়াকলে ৪ বার পিছিয়েছিল টেন্ডারের তারিখ (২৪ জুন, ১৫ জুলাই, ৩ আগস্ট ও ২৫ আগস্ট)।
সে বছর ২৫ আগস্ট টেন্ডার শেষে তিন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র পাঠানো হয় মূল্যায়ন কমিটির কাছে। কিন্তু তাদের মধ্যেও যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এনবিআর। এর প্রেক্ষিতে এস্ট্রোফিজিক্স ইনকর্পোরেশন নামের এক দরদাতা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত বিভাগ ‘সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ)’ এক অভিযোগ দাখিল করে। তবে এনবিআরের বিপক্ষে ওই অভিযোগ বাতিল করে সিপিটিইউ। পরে ওই দরদাতা আশ্রয় নেয় উচ্চ আদালতের। সেখানেও রায় এনবিআরের পক্ষে যায় এবং কনটেইনার স্ক্যানার ক্রয়ের কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়।
পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস অডিট, মর্ডানাইজেশন এন্ড ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার) ড. আবদুল মান্নান শিকদার ২০২২ সালের ২৬ মে পুনরায় একই দরপত্র আহ্বান করেন। যার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে একনেকের অনুমোদন নিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতেই ২০ মাস সময় ব্যয় হলো। এতো কিছুর পরে এবার স্ক্যানারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে চলে আসার পরেও শুধু জায়গা নির্ধারণ না হওয়ার কারণে পাঁচ মাস ধরে থমকে আছে কাজ।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেটে স্ক্যানার আছে ৯টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ১ নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ৩ নম্বর গেটে আছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ২, ৪ ও ৫ নম্বর গেটে আছে একটি করে এফএস ৩০০০ মডেলের ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার। এ ছাড়া সিসিটি-২ ও জিসিবি-২ নম্বর গেটে রয়েছে একটি করে মোবাইল স্ক্যানার। ৪ নম্বর গেট ও সিপিএআর গেটে রয়েছে এফএস ৬০০০ সিরিজের অত্যাধুনিক ফিক্সড কনটেইনার স্ক্যানার।