জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিশেষায়িত ব্যাংক চায় বিডা
দেশের জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণ শিল্পে বিশেষায়িত ব্যাংক চায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সম্প্রতি সংস্থাটির একটি পর্যবেক্ষণে এমনটি উঠে এসেছে। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে বিডা সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি দ্য প্রসপেক্টস অ্যান্ড প্রবলেমস অব শিপ-বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ: এ কম্পারিজন স্টাডি ওভার সাউথ-এশিয়ান রিজিম শীর্ষক একটি স্টাডি রিপোর্ট প্রকাশ করে বিডা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্প্রসারণে বড় অংকের চলতি মূলধন ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিশেষায়িত দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন স্কিম ছাড়া এ শিল্পের সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। তাছাড়া ব্যাংকগুলো কম সুদে দীর্ঘমেয়াদি ও সর্বনিম্ন জামানতের মাধ্যমে ঋণ দিতে আগ্রহী না হওয়ায় এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য পুঁজির সংকুলান করা কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সহজে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতেই মূলত বিশেষায়িত ব্যাংক চালু সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানায় বিডা।
স্থানীয় জাহাজ নির্মাণকারী এবং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে ব্যাংকগুলো এ খাতে ৯ শতাংশ সুদে বাণিজ্যিক ঋণ বিতরণ করে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের মতো দীর্ঘমেয়াদি খাতে এ ধরনের সুদহার বোঝা। অবকাঠামো খাতেও খুব বেশি বিনিয়োগ পাওয়া যায় না। তার ওপর ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকগুলো দ্বিগুণ সিকিউরিটি চায়, যা ঋণ পেতে সমস্যার সৃষ্টি করে। এতদিন ঋণ দিয়ে এলেও এ শিল্পের অর্থ প্রবাহের গতি সম্পর্কে ব্যাংকগুলো জানে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তবে এ পর্যবেক্ষণের বিপরীতে বণিক বার্তাকে ভিন্ন কথা জানিয়েছেন ব্যাংক ও জাহাজ নির্মাণসংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ব্যাংকগুলো আদ্যোপান্ত সবকিছু জেনে গ্রাহকের জন্য ঋণ ছাড় করে। বিডার এ ধরনের পর্যবেক্ষণ কোথা থেকে তা আমরা জানি না। এটা বিডার নিজস্ব মতামত।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন নাসরুল্লাহ বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্পের আমদানি-রফতানি, এলসি ডকুমেন্টেশন, ডলার ডিসবার্সমেন্ট থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে ব্যাংক জানে। সম্পূর্ণ ডকুমেন্টেশনও ব্যাংকের কাছে থাকে।’
জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকগুলো অর্থ প্রবাহের গতি সম্পর্কে না জানার বিষয়টি সঠিক নয়। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পণ্যের অর্ডার নেয়া থেকে শুরু করে সব ধাপে ব্যাংক জড়িত থাকে। এটা ওয়ার্ক অর্ডারের মতো কাজ করে। আমরা ঋণ দেই, সেই ঋণের বিপরীতে কী আমদানি এবং রফতানি হবে, তার সব হিসাব ব্যাংকের কাছে থাকবে। ব্যাংক জানে কোন খাতে ঋণ দেয়া হবে, সেগুলো কীভাবে ফেরত পাবে, ডলার ডিসবার্স করা হবে কীভাবে। গ্রাহক সব ডকুমেন্টস ব্যাংককে প্রদান করে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে।
জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী সদস্য মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা জরিপটি যখন পরিচালনা করি তখন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাদের কিছু বিষয় ছিল, সেগুলো এতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের অনেক দাবি ছিল, যা আমরা জরিপে তুলে ধরেছি। আমাদের এখানে জাহাজ নির্মাণ-ভাঙা শিল্প এক সময় খুব ভালো করেছিল। পরে এ শিল্পে নানা সংকট আসে, সেখান থেকে এ অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যদি এ খাতকে বুস্ট করা যায়, তাহলে হয়তো ভালো কিছু হবে।’ সূত্র: বণিক বার্তা