জাহান্নাম হয়ে জান্নাতে যাবেন যারা
যারা ঈমানদার তারা জান্নাতে যাবেন। আর যারা কাফির (ঈমান আনেনি) তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবেন।
এটা আল্লাহ তাআলার মৌলিক নীতি। কিন্তু এমন কিছু ঈমানদার আছেন, যারা মুসলমান হয়েও প্রথমবারে জান্নাতে যাবেন না।
বরং তারা নিজেদের গুনাহর কারণে প্রথমে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবেন। তারপর আল্লাহ তাআলা চাইলে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
তবে তারা যদি মৃত্যুর আগে আল্লাহর কাছে তওবা করে নিজেদের গুনাহ মাফ করিয়ে নেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদের বিনা শাস্তিতে জান্নাত দিতেও পারেন।
জাহান্নাম হয়ে কারা জান্নাতে যাবেন- হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো-
যে হারাম খাবার খায় জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা লালিতপালিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ (বায়হাকি শরিফ, হাদিস নং ৫৫২০)
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। ’ (বুখারি, হাদিস নং ৫৫২৫)
প্রতিবেশীকে কষ্টদাতা আবু হুরাইরা (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘যার অত্যাচার (আচরণ) থেকে প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয়, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। ’ (মুসলিম, হাদিস নং ৬৬)
অবাধ্য সন্তান ও ‘দাইয়ুস’ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে যাবেন না—মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস (অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-বোন প্রমুখ অধীন নারীকে বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেন না) এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী। ’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ২২৬)
অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি হারেছা বিন ওহাব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি লোক জান্নাতে যাবেন না। ’ (আবু দাউদ, হাদিস নং ৪১৬৮)
প্রতারণাকারী শাসক মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মুসলমানদের ওপর প্রতিনিধিত্বকারী শাসক যদি এ অবস্থায় মারা যায় যে, সে তার অধীনদের ধোকা দিয়েছে। তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং ৬৬১৮)
অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কসম করে কোনো মুসলমানের সম্পদ আত্মসাৎ করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং জান্নাত হারাম করেন। এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যদি সামান্য কোনো জিনিস হয় তিনি বললেন, পিপুল গাছের একটি ছোট ডাল হলেও। ’ (সহিহ মুসলিম ১৯৬)
খোঁটাদাতা, অবাধ্য সন্তান ও মদ্যপী আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘উপকার করে খোঁটা দানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, সর্বদা মদপানকারী—এই তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস নং ৫৫৭৭)
‘চোগলখোর’ (যারা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশে কুৎসা রটায়) হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। ’ (মুসলিম, হাদিস নং ১৫১)
অন্যকে নিজের পিতা পরিচয়দাতা সাদ (রা.) ও আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজেকে অন্য পিতার সঙ্গে সম্পর্কিত করে—অর্থাৎ নিজেকে অন্য পিতার সন্তান বলে পরিচয় দেয়, তার জন্য জান্নাত হারাম। ’ (বুখারি, হাদিস নং ৬২৬৯)
দাম্ভিক ও অহংকারকারী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। ’ (মুসলিম, হাদিস নং ১৩১)
আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর নাফরমান আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার সব উম্মত জান্নাতে যাবেন, কিন্তু যিনি (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছেন, তিনি নন। সাহাবিরা বললেন, আল্লাহর রাসুল! কে অস্বীকার করেছেন তিনি বললেন, যিনি আমার আনুগত্য করেন, তিনি জান্নাতে যাবেন। আর যিনি আমার নাফরমানি করেন, তিনি (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং ৬৭৩৭)
দুনিয়াবি উদ্দেশে ইলম শিক্ষাকারী আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয়, সেই ইলম যদি কোনো ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ-সম্পদ হাসিলের উদ্দেশে শিক্ষা করেন, তিনি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেন না। ’ (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩১৭৯)
যে নারী অকারণে তালাক চান সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে নারী তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করেন, তিনি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেন না। ’ (তিরমিজি ১১০৮)
কালো কলপ ব্যবহারকারী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘শেষ যুগে কিছু লোক কবুতরের সিনার মতো কালো কলপ ব্যবহার করবেন। তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেন না। ’ (নাসায়ি, হাদিস নং ৪৯৮৮)
লৌকিকতা প্রদর্শনকারী আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম একজন শহীদকে ডাকা হবে। অতঃপর একজন কারিকে। তারপর একজন দানশীল ব্যক্তিকে হাজির করা হবে। প্রত্যেককে তার কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। অতঃপর শহীদকে বীর-বাহাদুর উপাধি লাভের উদ্দেশে জিহাদ করার অপরাধে, কারি সাহেবকে বড় কারির উপাধি ও সুখ্যাতি লাভের জন্য কেরাত শেখার অপরাধে এবং দানশীলকে বড় দাতা উপাধি লাভের উদ্দেশে দান-সদকা করার অপরাধে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং ৩৫২৭)
ওয়ারিসকে বঞ্চিতকারী রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওয়ারিসকে তার অংশ (প্রাপ্য) থেকে বঞ্চিত করল, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ ২৬৯৪)
আল্লাহ আমাদের এসব অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে পরকালে সর্বাগ্রে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন।