জীবন বাঁচাতে সাগরের লবণাক্ত পানি খাচ্ছে গাজাবাসী
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত। সেখানে তীব্র মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধের কারণে খাবার, পানিসহ জরুরি পণ্যের মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় জীবন বাঁচাতে গর্ভবর্তী নারী, শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ লবণাক্ত ও দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে গাজার হাজার হাজার মানুষের নোনা ও দূষিত পানি পান করার বিষয়ে বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে। ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ এই খবর দিয়েছে।
হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর রিপোর্ট করেছে যে, গাজায় প্রায় ৫২ হাজার গর্ভবতী নারী এবং ছয় মাসের কম বয়সী ৩০ হাজারের বেশি শিশুকে লবণাক্ত বা দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে।
ইসরায়েল গাজার জনগণের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। পানি সংকটের কারণে তৃষ্ণা নিবারণ ও কলেরাসহ সংক্রামক রোগের আশঙ্কা করছেন গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এদিকে রোববার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় রোববার আরও ৩৩ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরায়েলের নিরবিচ্ছিন্ন হামলার মধ্যে গত সপ্তাহে গাজায় প্রথম ২০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করে। এরপর গাজায় প্রবেশ করা ত্রাণের সবচেয়ে বড় চালান এটি।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, এসব ট্রাকে ছিল পানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী।
জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে যে, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত মিশরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজায় ত্রাণবাহী ১১৭টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। যদিও সেটি গাজার প্রায় ২৪ লাখ মানুষের জন্য অপ্রতুল। অবরোধের আগে, প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ট্রাক সাহায্য এবং অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত।
ইসরায়েল গাজায় সর্বত্মক অবরোধ আরোপ করেছে। এমন অবস্থায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতালগুলো জেনারেটরের মাধ্যমে চলছে। বেশিরভাগ হাসপাতালই জ্বালানি সংকটে ভুগছে। এমন অবস্থায়ও গাজায় এখন পর্যন্ত কোনও জ্বালানী সরবরাহ করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি শিশু। এছাড়া এ বর্বর হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯ হাজার ৭৩৪ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত হয়েছেন।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় হাজার হাজার ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। বিশাল অবরুদ্ধ এই উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।