টেলিটকের মার্কেটিং বন্ধ রাখার ঘোষণা ডিলারদের
আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদান প্রতিষ্ঠান টেলিটকের বর্তমান ও সাবেক ডিলারদের ন্যায্য পাওয়া আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করাসহ একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছে টেলিটক ডিলারর্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ। এসব দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সকল ডিলাররা লিফটিং ও মার্কেটিং বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. রেজাউল করিম জাহাঙ্গীর বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটককে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিগত স্বৈরাচার সরকারের আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে বর্তমান সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজমেন্ট টেলিটককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছেন। এই গ্রুপের একমাত্র কাজ হলো টেলিটককে একটি লস প্রজেক্ট হিসাবে দাঁড় করিয়ে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করে বড় আকারের কমিশন বাণিজ্য করা। এরই ধারাবাহিকতায় মার্কেটে সিমের চাহিদা থাকলেও চাহিদা মোতাবেক সিম ডিলারদের কাছে দেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, রিটেইলারদের টেলি চার্জ ও পল্লী বিদ্যুৎ সেল করার জন্য টেলি-পে অ্যাপ সামান্য অজুহাতে মাঝে মাঝে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিম অ্যাক্টিভেশন ও প্রথম রিচার্জ করতে অন্তত ২০ মিনিট সময় লাগে। যাতে করে রিটেলাররা টেলিটকের সিম বিক্রয় করতে অনীহা প্রকাশ করে। টেলিটকের টাওয়ারে ব্যাটারি ব্যাকআপের কোনো ব্যবস্থা নাই। কারেন্ট চলে যাওয়ার সাথে সাথেই নেটওয়ার্কও চলে যায়। আরও কষ্টের কথা হলো আমাদের এবং রিটেলারদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিম প্যাকেজের প্রাপ্য ইউজেস কমিশন অফিস অর্ডার থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এসব কারণে বর্তমানে আমাদের সকল ডিলাররা প্রতি মাসে আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের মাসিক এস আর, সুপারভাইজার এবং বিপিদের বেতন বাবদ কম্পেনসেশন, বর্তমান জিএম সর্বশেষ ২০২১ সালের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর প্রদান করেছেন। কিন্তু জানুয়ারি ২০২২ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখেছে।
জাহাঙ্গীর বলেন, টেলিটক প্রথমে প্রত্যেক ডিলারের কাছ থেকে জামানতস্বরূপ এক লাখ টাকা করে নেয় এবং পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুৎ/টেলিচার্জ বাবদ সারা বাংলাদেশের ডিলারদের কাছ থেকে ২০১৯ সালে ডিলার প্রতি ৩ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট নেয়। কিন্তু বছরখানেক পর কিছু অসাধু কর্মকর্তা পল্লী বিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওয়ার বাই টেলিটক হিসেবে চুক্তি করে। এতে ডিলারদের বিদ্যুৎ বিল ও টেলিচার্জ ব্যবসা কমতে শুরু করে এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে আসে।
এ সময় কিছু দাবি তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১। স্মারক নম্বর টিবিএল/এমকেটি/ডিলারর্স/২০০৯/২৮ (০১/০৪/২০১৬) অনুযায়ী ডিলার হাউজের এসার, সুপারভাইজার এবং বিপিদের বেতন বাবদ কম্পেনসেশন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের চলতি মাস পর্যন্ত সকল বকেয়া কম্পেনসেশন অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। যা আনুমানিক ১৩ কোটি টাকা।
২। প্রত্যেক ডিলার হতে নেওয়া পল্লী বিদ্যুৎ/টেলিচার্জ বাবদ অতিরিক্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে। যা আনুমানিক ৭৫ কোটি টাকা।
৩। ডিলার ও রিটেলারদের পাওনা শতবর্ষ, বর্ণমালা স্বাগতম এবং অপরাজিতা প্যাকেজের ইউজেস কমিশন অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে এবং অপরাজিতা প্যাকেজেরে এসএএফ কমিশন প্রদান করতে হবে।
৪। টেলিটক থেকে অব্যাহতি নেওয়া সকল ডিলারদের সিকিউরিটি ডিপোজিটসহ সকল পাওনাদি অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
৫। কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে কম্পেনসেশন দেওয়ার আগেই ৩০ শতাংশ টাকা অগ্রিম নিয়ে কম্পেনসেশন দেওয়া হত। এই ৩০ শতাংশ টাকা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে।
কিছু সংস্কার দাবিও করেন তারা। সেগুলো হলো-
১। বিগত সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংস্কার করতে হবে এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) কর্মকর্তাদের টেলিটকে নিয়োগ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
২। মার্কেটে সিম চাহিদা মোতাবেক প্রদান করতে হবে এবং নতুন প্যাকেজের সিম আনতে হবে।
৩। টেলি পে অ্যাপস আপগ্রেড করতে হবে এবং অ্যাপসের যেকোনো সমস্যার সমাধান দ্রুততম সময়ে করতে হবে এবং সিম অ্যাক্টিভেশন অ্যাপ আপগ্রেড করতে হবে।
৪। সব টাওয়ারে ব্যাটারি ব্যাকআপের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। রিটেলারদের বিভিন্ন অফার সেলে এক্সট্রা কমিশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। মাদার সিম থেকে এসআর সিমে টাকা ট্রান্সফার করার পর অবিকৃত টাকা মাদার সিমে ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭। রিটেলারদের কে এমএনপি করার সুযোগ দিতে হবে এবং প্রত্যেকটা এমএনপির জন্য কমিশন দিতে হবে।
৮। দ্রুততম সময়ে সকল টু-জি টাওয়ারকে ফোর-জিতে রূপান্তর করতে হবে।
৯। ডাটা ব্যবহারের জন্য স্পেশাল স্টুডেন্ট সিম প্যাকেজ আনতে হবে।