স্বাস্থ্য

ঠাণ্ডায় কাবু শিশুরা: ধারণ ক্ষমতার ৫ গুণ রোগী হাসপাতালে

জেলায় ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

গত কয়েকদিনে দিনে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার ৫ গুণ অতিরিক্ত রোগী এসেছে। তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

এ ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বলেন, শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে ভর্তি ছিল ১৩৫ জন। রোগীর তুলনায় শিশু চিকিৎসক অপ্রতুল। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে এত রোগীর চাপ সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যে হাসপাতালের স্ক্যানু বিভাগও চালু।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। তবে শিশু রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিশু চিকিৎসকের সংকট মেটানোর কথা বললেও কোনো সুফল পাচ্ছি না।

হাসপাতালের শিশু বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের ভেতর জায়গা না হওয়ায় অতিরিক্ত শিশু রোগীদের নিয়ে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে ঠাঁই নিয়েছেন অভিভাবকরা। ওয়ার্ডের ভেতর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের সেবা নিতে রোগীর স্বজনরা তাদের কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা বলছেন, হাসপাতালে বারান্দায় কোনোরকম বিছানা পেতে থাকলেও সুচিকিৎসা পাচ্ছি না।

শামীমা নামে এক শিশুর অভিভাবক বলেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসে ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। ফলে সুস্থ হওয়ার বদলে আরও বেশি সংক্রমিত হচ্ছে তারা।

আরেক রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই- এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ৪ দিন হলো এসেছি। ওয়ার্ডের ভেতর এতো রোগী- ডাক্তার আসেন দুয়েকজন। তারা রোগীর সমস্যা ভালোভাবে বুঝতে পারেন না।

আরেক রোগীর মা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ওয়ার্ডে ৩/৪ জন নার্স ডিউটি করেন। রোগীর চাপ বাড়লে তাদের সাথে কথাই বলা যায় না। প্রায়ই তারা রোগীর স্বজনদের সাথে অশোভন আচরণ করেন।

হাসপাতালের শিশু বিভাগে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স শ্যামলী রাণী বলেন, গত কদিন ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। এত রোগীর চাপ সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে কষ্টকর। পূর্ণ সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।

আরএমও জানান, শিশুদের বেশিরভাগই নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, জ্বর সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এখন আবার নতুন করে হ্যান্ড ফুড অ্যান্ড মাউথ নামে নতুন আরেকটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

হাসপাতালে রোগীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক সংকট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. মো. আসিফ ইকবাল। তিনি বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করার মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসক এখানে নেই। চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রায়ই সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন বর্হির্বিভাগ ও ওয়ার্ডে যে পরিমাণ শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে- সে তুলনায় আমাদের চিকিৎসক নেই। মাত্র ৩ জন চিকিৎসককে অধিক চাপ সামলে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

আসিফ ইকবাল আরও বলেন, ওয়ার্ডে শয্যা আছে ২৬টি, রোগী ভর্তি থাকে একশোর বেশি। হাসপাতালে রোগী এলে ফিরিয়ে দেওয়ার যেহেতু সুযোগ নেই, আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু যদি সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসক না থাকে তাহলে সেবা দেওয়াটা কষ্টসাধ্য। অপর্যাপ্ত চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল চালাচ্ছি আমরা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো সুফল মিলছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d