চট্টগ্রাম

ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে চট্টগ্রাম দোহাজারী রেলপথ

প্রায় সাড়ে তের হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম দোহাজারী রেলপথ ডুয়েলগেজ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি গতকাল একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলসংযোগ নির্ঝঞ্জাট করতে নয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ রয়েছে। দীর্ঘদিনের পুরনো এই পথটি ইতোমধ্যে বেশ লক্কর ঝক্কর হয়ে উঠেছে। এই পথটিকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। আবার নগরীর পাহাড়তলী থেকে ঝাউতলা হয়ে ঢাকা–চট্টগ্রাম রেলপথের সাথে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথের সংযোগ গড়তে একটি ‘কানেক্টিং কার্ভ’ও নির্মাণ করা হবে। এতে প্রস্তাবিত রেলপথের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৫২ কিলোমিটার। নয়া এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রেলওয়ে ব্যয় ধরেছে ১১৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার বা প্রায় ১৩ হাজার ৪৩৬ কোটি ৬০টাকা।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ১০৩ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণ খরচ অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেড়ে গেছে। বর্তমানে কোন ভূমি হুকুমদখল করতে মৌজা ভ্যালুর তিনগুণ দাম পরিশোধ করতে হয়। দেশের প্রতিটি মৌজারই দর বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় অনেক বেড়ে যায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া প্রকল্পটিতে রেললাইনের বাইরেও ২৪টি মেজর ও ৯৫টি মাইনর সেতু পুর্ননির্মাণ করতে হবে। সেতু নির্মাণ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। রড সিমেন্ট এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এসব ক্ষেত্রেও ব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির আওতায় দুইটি রেলওয়ে স্টেশন নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এখাতেও খরচ বেড়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের মূল কাজ ১০৭ কিলোমিটার ট্র্যাক ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতেও বিপুল অর্থের প্রয়োজন। সবকিছু হিসেব নিকেশ করেই প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।

সূত্র বলেছে, প্রকল্পটির জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪২৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের মূল কাজ অর্থাৎ রেল ট্র্যাক নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৫৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের মাটি ভরাট খাতে ১ হাজার ৭২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পের আওতায় স্টেশন ও ভবন নির্মাণে ৭১১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে ১ হাজার ৩১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, সিগন্যালিং ও টেলিকমে ৩০৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং প্ল্যান্ট ও ইক্যুইপমেন্টে ৩০৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর বাইরে পরামর্শক খাতে ৫৮৮ কোটি টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এডিবি ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, এডিবি এই প্রকল্পের জন্য ৭৬ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার কথা রয়েছে। বাকি টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেবে। রেলওয়ের পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম–দোহাজারী মিটারগেজ রেলপথ ডাবল লাইন করা জরুরি। এই প্রকল্পের আওতায় ১০৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম কঙবাজার রেললাইনকে গতিশীল করতে এই প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d