তরুণ প্রজন্ম রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি
দেশের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা এবং তামাকজনিত মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের সদস্যরা।
বুধবার (২৬ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে (এলডি হল) সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং’ এর সভায় তারা এ আহ্বান জানান।
সভায় সংসদ সদস্যরা (এমপি) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ধূমপান মুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশকে অবশ্যই তামাকমুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশে তামাক এবং তামাকজাত পণ্যের বিস্তার হয়েছে ভয়াবহভাবে। দেশে ১৫ বছরের ওপরে ধূমপায়ীর সংখ্যা শতকরা ৩৯ দশমিক এক শতাংশ এবং এর নিচে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ শিশুই ধূমপায়ী। এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কিশোর-তরুণদের ধূমপান থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে।
নারী ও শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে রক্ষা করা জরুরি উল্লেখ করে সংসদ সদস্যরা বলেন, দেশে প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুরা ধূমপান না করেও প্রতিনিয়ত নানাবিধ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমাদের জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমে আমরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।
সংসদ সদস্যরা আরও বলেন, দেশে ব্যাপক হারে হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস বা ই-সিগারেটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। যা দেশের জন্য অশনি সংকেত। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে ইতোমধ্যে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা জরুরি।
পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল আজিজ বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা, তা বাস্তবায়নে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি। তাই আমরা আশাবাদী স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিগগিরই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেবেন।
আব্দুল আজিজ আরও বলেন, দেশে তামাকের বিস্তার ঠেকাতে কার্যকর করারোপ করাও জরুরি। কার্যকর করারোপ করতে পারলে প্রতিবছর ১০ লাখ মানুষকে ধূমপান বিরত রাখা সম্ভব।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং প্রতিদিন ৪৪১ জন মানুষ মারা যায়। তামাক নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধ করে এবং মানুষের জীবন রক্ষা করে। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সংসদ সদস্যদের আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, দেশকে এ বিপুল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সংসদ সদস্যরা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তা অর্জনে সহায়তা করবে।
সভায় অন্যান্য সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পংকজ নাথ, শবনম জাহান, দ্রৌপদী দেবী আগারওয়াল, জারা জাবীন মাহবুব, কানন আরা বেগম, মোসা. ফারজানা সুমি, সাবেরা বেগম, পারুল আক্তার, কোহেলী কুদ্দুস, আশ্রাফুন নেছা ও লায়লা পারভীন।
সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং এর সমন্বয়ক ড. রফিকুল ইসলাম।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো ফ্রি কিডস এর রিজিওনাল ডিরেক্টর ড. মাহিন মালিক, ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশ’ এর পলিসি লিড মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন‘ বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং এর সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে থাকে।